Sunday, June 10, 2018

যাকাত

কোরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাত

================

যাকাত কি ?

-------

যাকাত ইসলামের পাঁচটি ভিত্তিসমূহের একটি ভিত্তি। যা ইসলামের মৌলিক ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম ইবাদত। প্রত্যেক মুসলমানকে যেমন যাকাত ফরয হওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস করতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে যার উপর যাকাত ফরয তাকে তা নিয়মিত পরিশোধও করতে হবে। যাকাত একজন মুসলমানের অর্থ-সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। যাকাতের শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি, পরিশুদ্ধি, বরকত ইত্যাদি। কারণ যিনি যাকাত প্রদান করবেন, তার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে তা তাকে বালা-মুছিবত থেকেও রক্ষা করবে। যাকাত প্রদানকারীর মন পবিত্র হয়, তার সম্পদে বরকত হয় এবং তা বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহ পাক সুরা তওবার ১০৩ নং আয়াতে ঘোষণা দেনঃ

"হে নবী! আপনি তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) নিয়ে তাদরেকে পাক পবিত্র করুণ, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুণ। আপনার দোয়া তাদের সান্ত্বনার কারণ হবে। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।" (সুরা তওবাঃ ১০৩)

যাকাত ফরজ হওয়ার দলীল

----------------

"তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। (বাইয়্যিনাহঃ ৫)

“যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (সুরা বাক্বাররাঃ ২৭৭)

কুরআন শরীফে আল্লাহ তা'আলা যখনই নামায প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন, পাশাপাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাকাত আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'নামায কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো'। [দেখতে পারেন ২:৪৩, ২:৮৩, ২:১১০, ২৪:৫৬, ৫৮:১৩ –ইত্যাদি আয়াতগুলো।]

আবি আবদুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে ওমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি যে, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দেয়া, শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা”। (বুখারী ও মুসলিম)

যাকাত কখন ফরজ?

-------------

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ-মস্তিষ্ক প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর মালিকানায় নিসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে এবং তা এক চন্দ্রবছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার ওপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯, ৮২)

যেসব জিনিসের ওপর জাকাত ফরজ হয়

------------------

* সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়। আলবাহরুর রায়েক ২/২০৯

* ব্যাংক-ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, ট্রেজারি বিল, ব্যাংক গ্যারান্টি মানি ইত্যাদি নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপর যাকাত ফরজ হবে।

* সোনা-রুপার অলঙ্কার সবসময় বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক, সব অবস্থায় তার যাকাত দিতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৫, হাদিস : ১৫৬৩; সুনানে কুবরা, নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮)

* হজের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘরবাড়ি নির্মাণ, ছেলেমেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়, তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে বছরান্তে এর ওপরও যাকাত ফরজ হবে। অবশ্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি খরচ হয়ে যায়, তাহলে তার যাকাত দিতে হবে না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭০৩২)

জাকাতের নিসাব

-------------

* স্বর্ণের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি।

* রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।

* টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯৯৩৭)

যেসব জিনিসের ওপর যাকাত ফরজ নয়

----------------

* নিজের ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরজ নয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫)

* গৃহের আসবাবপত্র, যেমন খাট-পালং, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গৃহসামগ্রী, যেমন হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির ওপর যাকাত ফরজ নয়—তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭০৯৩, ৭০৯২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১০৫৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৫)

* পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে, তবুও তাতে যাকাত ফরজ হবে না।—রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

কখন কীভাবে যাকাত দিতে হবে?

--------------------------

* যেদিন চন্দ্রবছর হিসেবে এক বছর পূর্ণ হবে, যেমন এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত, সেদিন সঞ্চিত সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়ে যায়। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব না করে আদায় করে দেয়া উত্তম। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১০৫৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৭)

* যে সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ (২.৫%) যাকাত আদায় করা ফরজ। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭০৭৭)

* ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে পাইকারি বাজারদর অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করবে।

* অনেকেই কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে যাকাত দেবার রীতি প্রচলন করেছেন। সবচে' উত্তম রীতি হলো যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করে গেছেন। আর তা হল নগদ অর্থ। আপনার দেয়া নগদ অর্থে গরীবেরা তাদের পছন্দ মত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারবে।

যাকাত যার প্রাপ্য!

===========

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত একটি। এর হক্ব ঠিকমতো আদায় না হলে আমরা নিজেকে পুরোপুরি মুসলমান বলে দাবী করতে পারি না। কেননা, আল্লাহ পাক আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুরোপুরি রূপে ইসলামে প্রবেশ করার জন্য। আপনার জাকাত প্রকৃত হকদারকে দিচ্ছেন তো? সাবধান, কিছু মানুষের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে টিভি চ্যানেলসহ কোন প্রতিষ্ঠানকে দিলে আপনার ফরজ আদায় হবে না। পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জাকাত বা সাদাকা প্রাপ্যদের তালিকা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ

"সাদাকাহ বা জাকাত পাবার যোগ্যতা রাখে শুধুমাত্র ফকির, মিসকীন, যাকাত সংগ্রহকারী, যাদের অন্তরে (ইসলামের প্রতি) ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা আছে, আর ক্রীতদাস মুক্তিতে, ঋণগ্রস্থরা, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে আর মুসাফির। এটা আল্লাহর তরফ থেকে ফরয। আল্লাহ পাক সমস্ত কিছু জ্ঞাত আছেন, আর তিনি হিকমাতওয়ালা।" (সুরা তাওবাহ আয়াত ৬০)

উপরোক্ত আয়াতে ৮ ধরনের লোকের কথা বলা হয়েছে।

১) ফকিরঃ তার যা প্রয়োজন তা তার কাছে একেবারেই নেই ।

২) মিসকীনঃ মিসকীন ফকিরের চেয়ে উত্তম । যেমন তার প্রয়োজন ১০ টাকার আছে মাত্র ৭ টাকা। আল্লাহ বলেন - "আর ঐ নৌকা যা ছিল কয়েকজন মিসকীনের, যারা সমুদ্রে কাজ করত।" (সুরা কাহাফ আয়াত ৭৯)

৩) যাকাত সংগ্রহকারীঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪) যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছেঃ যে সমস্ত গরীব বিধর্মী যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় বা মুসলিমদের শত্রুর হাত হতে রক্ষা করতে চায় তাদের যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন সফওয়া ইবনু উমাইয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গণীমাত দিয়েছিলেন। রাসুল (দঃ) আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে, আক্বা ইবনু হাবেসক এবং উয়াইনাহ ইবনু মিহসানকে জাকাত দিয়েছিলেন (মুসলিম)।

৫) ক্রিতদাস মুক্তিতেঃ দাসদের মুক্ত করা, শত্রুর হাতে বন্দী তাদেরও মুক্ত করা ইত্যাদি। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।

৬) ঋণগ্রস্থঃ সেসব গরীব যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে। বাংলাদেশসের লক্ষ লক্ষ ঋণ খেলাফী ধনী এর আওতায় আসবেনা যারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে পারছে না। তাদের ওই ঋণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে নেয়া হয়নি। বরং তা নেয়া হয়েছিলো নিজেদের বিলাশিতাকে পরিপূর্ণ করার মানসে।

৭) যারা আল্লাহর রাস্তায় আছেঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। বর্তমানে জিহাদের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কাজেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। এতিমখানায় দেয়া যেতে পারে যেখানে গরীব বাচ্চারা লেখাপড়া করে। তবে প্রাপ্ত জাকাত বা ফিতরার টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়া যাবেনা। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}

৮) মুসাফিরঃ ঐ মুসাফির যে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা দেশ হতে অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে নিজ গৃহে ফিরতে পারছে না। তাকে ঐ পরিমান যাকাত দেয়া হবে যাতে নিজের গৃহে ফিরে আসতে পারে। যদি কোথাও ধার কর্জ পায় তবে যাকাত নিতে পারবে না।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান বা মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮, আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}

কোন টিভি-চ্যানেলে দিলে যাকাত আদায় হবেনা

-----------

কোন টিভি চ্যানেল বা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে জাকাত দিলে তা আদায় হবেনা। কেননা এতে জাকাত প্রাপ্ত এতিম বা গরীব মানুষগুলো জাকাতের প্রকৃত মালিক নির্ধারিত হয় না। টিভি চ্যানেলগুলো ইসলাম প্রচার বা দাওয়ার কাজ করলেও আপনি আপনার ফরজ জাকাত সেখানে দিতে পারবেন না। কেননা জাকাত আল্লাহ পাক কর্তৃক সুনির্ধারিত সুনির্দেশিত একটি আমল। এটা একেবারেই গরীবের হক্ব। কোন প্রতিষ্ঠানের হক্ব নয়। আর টিভির মাধ্যমে ইসলামের দাওয়া দেয়া তো বিদাত। যদিও তা বিদাতে হাসানা। এ কাজটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কিংবা কোন সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তাবেঈ কিংবা তাবে-তাবেঈন করেন নি। কেননা ওই সময়ে টিভি চ্যানেল ছিল না। ফলে এটি একটি বিদাত। যারা শবে মি'রাজ, শবে বারাত বা ঈদে মীলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালনকে বিদাত বলে ফতোয়া দিয়ে থাকেন আর সর্বক্ষণ "শিরক-বিদাত, শিরক-বিদাত" আওড়ান, তারাই এখন তাদের ফতোয়া অমান্য করে টিভি চ্যানেলের জন্য জাকাত-ফেতরা তথা গরীবের হক্ব নেবার জন্য মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। কাজেই সাবধান! কারো ধোঁকা বা প্ররোচনায় আপনার জাকাত বিনষ্ট করবেন না। জাকাতের বাইরেও বাতিলপন্থী কিংবা নবী-ওলী বিদ্বেষী কোন প্রতিষ্ঠানে দান-খয়রাতে কোন ফায়দা তো নেই-ই উপরন্তু, বাতিলপন্থী বা নবী-ওলী বিদ্বেষীদের সহযোগিতার কারণে আপনিও নবী-ওলী বিদ্বেষী হিসেবে পরিগণিত হবেন। দেখুনঃ মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪

লিল্লাহ বোর্ডিং বা এতীমখানায় প্রদত্ত যাকাত যাতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইত্যাদিতে ব্যয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, এতে গরীব-মিসকীনরা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না

--------------------

* যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে যাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নিসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮)

* যাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন—রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুত্-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে যাকাতের বিধান দেয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েজ নয়; বরং যাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৬৯৪৭, ৬৯৪৮, ৭১৩৭, ৭১৭০; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪)

* নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি—যারা তার জন্মের উত্স তাদের নিজের যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। এভাবে নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেয়া জায়েজ নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮)

যাকাত পরিশোধ না করার পরিণাম

---------------

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যা পূঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর।” (সুরা তওবা-৩৪-৩৫)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি তার ধনসম্পদের যাকাত না দেয় তবে ঐ সম্পদ কিয়ামতের দিন অজগর সাপের আকার ধারণ করে তার গলদেশ বেষ্টন করবে”।

অতঃপর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুরা আল-ইমরানের ১৮০ নং তিলাওয়াত করলেন,

"আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।" (সুরা আল-ইমরানঃ ১৮০)

হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সুদখোর, সুদদাতা, এর সাক্ষী ও লেখক, উল্কি অংকনকারিণী এবং যে নারী উল্কি অংকন করায়, অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে যাকাত দিতে অস্বীকার করে, হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করানো হয়, এদের সকলের উপর আল্লাহর অভিশাপ বা লা’নত ”।(আহমাদ ও নাসায়ী)

হাদীসে বর্ণিত আছে , একদা দু’জন মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসল। তাদের দু’জনের হাতে স্বর্ণের কংকণ ছিল। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা তোমাদের অলংকারের যাকাত দাও কি?” তারা বললো, “না ”। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা কি পছন্দ করবে যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে আগুনের দু’টি বালা পরিয়ে দিবেন”? তারা দু’জন বলল, “না "। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তাহলে তোমরা এ স্বর্ণের যাকাত প্রদান কর ”। (তিরমিযি)

Saturday, June 9, 2018

নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য

নারী পুরুষ নামাজের পার্থক্যে সহীহ হাদীস। 

প্রথম পার্থক্য:-
১.হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাঃ থেকে বর্ণিত-
عن وئلِ بن حُجْرٍ قال:قال لي رسولُ اللّٰهِ صلى اللّٰه عليه وسلم،يا وائلَ بنَ حجرٍ اذا صلَّيتَ فاجعلْ يديكَ حذاءَ أذُنيكَ،والمرأَةُ تَجعَلُ يديها خذاءَ ثدْيَيْها 
হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি নবীজির নিকট আসলাম, তিনি আমাকে বললেন :হে ওয়ায়েল ইবনে হুজর!যখন তুমি নামাজ পডবে তখন তুমি তোমার হাত কান পর্যন্ত উঠাবে আর মহিলারা তাদের হাত বক্ষ বরাবর উঠাবে।

সুত্র:-তাবরানী-মু'জামুল কাবীর ২২/১৯, হাদীস নং ২৮;
হাইসামী-মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯/৩৭৪,হাদীস নং ১৬০০৫;

সনদ বিশ্লেষন:-ইমাম হায়সামী বলেন এই হাদীসের সমস্ত রাবী বিশ্বস্ত।তিনি আরো বলেন মায়মুনা বিনতে হুজর হাদীসটি তার মা উম্মে ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাব্বার থেকে বর্ননা করেছেন,আমি তার সম্পর্কে পরিচিত নই।বুঝা গেলো এই সনদে কোন আপত্তিকর রাবী নাই,শুধু তিনি একজনের জীবনী পাননি।কিন্তু আলোচ্য কথাটি লিখতে তিনিতো বলেই দিলেন রাবীটির নাম "উম্মে ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাব্বার" যিনি মায়মুনা বিনতে হুজর এর মা। তারপরও আমরা দেখবো ওনার জীবনী অন্য কোথাও পাওয়া যায় কিনা!

ইমাম আবু নুয়াইম রহঃ ও ইবনে আসাকীর রহঃ তার পরিচয় তুলে ধরেছেন-
حدثنا ميمونةُ بنتُ حجرِ بنِ عبدِ الجبارِ بنِ وائلٍ،قالت سمعتُ عمَّتِيَ كبْشَةَ ام يحي بنتِ عبدِ الجبار بنِ وائلٍ،عن اُمِّها وعن علقمةَ عنهما،عن وائلِ بنِ حجرٍ قال جئتُ الى رسولِ اللّٰه صلى اللّٰه عليه وسلم

ইমাম আবু নুয়াআইম রহঃ যথাক্রমে............
মায়মুনা বিনতে হুজর ইবনে আব্দুল জাব্বার বিন ওয়াইল তিনি বলেন,আমি উম্মে কাবসা অর্থাৎ উম্মে ইয়াইয়া বিনতে আব্দুল জাব্বার বিন ওয়ায়েল থেকে, তিনি তার মাতা এবং হযরত আলকামা রাঃ থেকে,তিনি সাহাবী ওয়ায়েল ইবনে হুজর থেকে,তিনি বলেন আমি নবিজীর নিকট গেলে....(উপরোক্ত হাদীস)।

সুত্র:-ইমাম আবু নুআইম ইস্পাহানী- মারিফাতুস সাহাবা ৫/২৭১১,হাদীস ৬৪৭৫;
ইবনে আসাকির-তারিখে দামেস্ক, ৬২/৩৯০পৃ;

তাহলে উক্ত রাবীর পরিচয় আরো ভালো করে পাওয়া গেলো যে, তিনি তাবেয়ী আলকামা রহঃ এর ছাত্রী ছিলো এবং তার সম্পুর্ন নাম হলো 'উম্মে ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাব্বার বিন ওয়ায়েল' অর্থাৎ প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আব্দুল জাব্বার বিন ওয়ায়েলের মেয়ে।তাই এই হাদীসটির সকল রাবী পরিচিত।
মনে রাখতে কোন রাবীর পরিচয় একজনের কাছে না থাকলে,আমাদের খুজে দেখতে হবে অন্য কোথাও পাওয়া যায় কিনা!
যদি পাওয়া যায় এমতাবস্হায় ঐ রাবীকে আর অপরিচিত বলা যায়না।এরপরও যারা আপত্তি তুলবে বুঝতে হবে আসমাউর রিজাল সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই নাই।

ফলাফল কি দাডালো?
যখন উক্ত রাবীর পরিচয় পাওয়া গেলো এবং বাকী সমস্হ রাবীও বিশ্বস্হ, তাই উক্ত মারফু হাদীসটি সহীহ।

২.ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ তার উস্তাদ ইবরাহীম ইবনে আব্দুল আ'লা রহঃ থেকে, তিনি হিশাম বিন উরওয়া রহঃ থেকে, তিনি হাসনা বসরী রহঃ থেকে,তিনি বলেন-
يُقامُ المرأةِ حيال ثدييها،ومن الرجل فوق ذالك 
মহিলারা তাকবীরে তাহরীমায় হাত বুক পর্যন্ত তুলবে এবং পুরুষেরা আরও উপরে উঠাবে।

সুত্র:-মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ (ইমাম বুখারীর শায়েখ),৩/৬,হাদীস নং ১১৫৪৮;

সনদের মানঃ-সকল রাবী বিশ্বস্ত অর্থাৎ হাদীসটি সহীহ। ইবনে আবি শায়বার উস্তাদও বিশ্বস্ত (ইবনে হাজার আসকালানী-তাহযিবুত তাহযীব ১/১৩৭,ক্রমিক ২৪৫)।


Friday, June 8, 2018

বিরল ছবি

আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়ার বিরল মনোগ্রাম।

Thursday, June 7, 2018

আলোর পথে আসুন


আবুল আলা মওদুদী সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ।

☞ জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ খাটো করার উদ্দেশ্যে নয় ; # মওদুদীর সাহেবের উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরেছি যেন অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে পারেন ।

.

আমার জানা মতে, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে।

.

☞দেখুন মওদুদী সাহেবের ঈমান বিঃধংসী মন্তব্যগুলো ..............

.

(নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা)

.

কিন্তু জনাব আবুল আলা মওদুদী সাহেব ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

.

☞উনার আক্বীদা☞ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে:

☞ “আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]

☞ “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্াম মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]

☞ “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]

. . .

বিভিন্ন নবী আঃ সম্পর্কে মওদুদী সাহেবের

কটুক্তি সমূহ .......................

.

☞ হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:

“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]

নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:

.

☞ “হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]

.

☞ “হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]

.

☞ হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:

“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]

.

☞ হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:

“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]

.

☞ হযরত মুছা (আ.) সম্পর্কে:

“নবী হওয়ার পূর্বে মুছা(আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, ৩১ পৃ.]

“মুছা(আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” [তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫]

.

নাঊজু বিল্লাহ মিন যালিক

. . .

☞ হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে:

“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িক ভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড, ৫৫৮ পৃ.]

.

☞ হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে:

“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড(সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.]

.

☞ হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে:

“হযরত ইউসুফ (আ.)- ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]

.

☞ সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে:

“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত: নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়।এখানে একটি সুক্ষ বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৪র্থ সংস্করন ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন অক্টোবর ১৯৯১ইং]

.

☞ “বস্তুত: নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শ:ই মানভীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষনের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” [তাফহিমুল কোরআন ২য় খন্ড, ৩৪৩-৩৪৪ পৃ. সংস্করন ১৯৯০ইং]

“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেন নি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা : ৩২৭ পৃ.]

.

☞” অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শ:ই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৫ম সংস্করন ১৯৫ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ২৮ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]

.

নাঊজুবিল্লাহ মিন যালিক ।

.

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা যে ব্যাক্তি সমস্ত রাসূল আলাইহিমুস সালাম গণের পবিত্র শানে এরকম জঘন্য কটুক্তি করতে পারে; তাকে কিভাবে অনুসরণ করা যায় ???

.

অতএব ,

আলোর পথে আসুন । ছুন্নীয়তই একমাত্র মুক্তির পথ ।

বিরল ছবি।

  1. সৈয়দ মুফতি আবেদ শাহ মুজাদ্দেদী রহ এর সভাপতিত্বে ওয়াজ মাহফিলের বিরল লিফলেট।

Featured post

ইসলামে ঈদ কয়টি?

ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করতে গিয়ে কিছু বাতিল সম্প্রদায় বলে থাকে যে, ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই ” । নাউ...