Sunday, February 10, 2019

ইসলামে ঈদ কয়টি?

ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করতে গিয়ে কিছু বাতিল সম্প্রদায় বলে থাকে যে, ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই ” ।

নাউযুবিল্লাহ সুম্মা নাউজুবিল্লাহ। 

.

"দুই ঈদ ব্যাতীত আর কোন ঈদ নাই"এই কথার মত হাস্যকর কথা আমি কমই শুনেছি। যারা এই কথা বলে তাদের জীবন কতটা যে নিরানন্দ আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। আল্লাহ পাক হয়তো তাদের জীবন থেকে সকল সুখ শান্তি উঠিয়ে নিয়েছেন তাদের বেয়াদবির কারনে। যারা বলে দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই,তারা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী। আর কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “যে আমার নামে মনগড়া মিথ্যা কথা বললো, সে দুনিয়া থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিলো।

(বুখারী শরীফ ১১০) শরীয়তে অসংখ্য ঈদ থাকার পরও যারা বলে দুই ঈদ ব্যাতীত ঈদ নাই তারা হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী, নজীজীর প্রতি মিথ্যারোপ কারী। কারন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই দুই ঈদ ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছেঃ

ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺴﺒﺎﻕ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻣﺮﺳﻼﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺟﻤﻌﺔﻣﻦ ﺍﻟﺠﻢﻉ

ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻳﻮﻡ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪﻋﻴﺪﺍ

অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ নির্ধারণ করেছেন।

(ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)


ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ " ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡُ ﻋِﻴﺪٍ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻓَﻤَﻦْ ﺟَﺎﺀَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﻠْﻴَﻐْﺘَﺴِﻞْ ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻃِﻴﺐٌ ﻓَﻠْﻴَﻤَﺲَّ ﻣِﻨْﻪُ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙِ

অর্থ: হযরত উবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।

(সুনানে ইবনে মাজাহ ১০৯৮, আল মুজামুলি আওসাত তাবরানী ৭৩৫৫)


কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ?দেখুন হাদীস শরীফে কি বলা হয়েছে-

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟـﺠﻤﻌﺔ ﺳﻴﺪﺍﻻﻳﺎﻡ ﻭﺍﻋﻈﻤﻬﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻫﻮ ﺍﻋﻈﻢ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻳﻮﻡﺍﻻﺿﺤﻰ

ﻭﻳﻮﻡ ﺍﻟﻔﻄﺮ

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭, মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১,শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩,মিশকাত শরীফ)


এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:

ﺍﻥ ﻣﻦ ﺍﻓﻀﻞ ﺍﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟـﺠﻤﻌﺔ ﻓﻴﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﺩﻡ ﻭﻓﻴﻪﻗﺐﺽ

অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১,মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭,ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)


হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি,দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ। এতটাই শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ,এবং ঈদের দিন।


সহীহ হাদীস শরীফে আছে আরাফার দিন ঈদের দিনঃ

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺑْﻦُ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺑْﻦُ ﻫَﺎﺭُﻭﻥَ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺣَﻤَّﺎﺩُ ﺑْﻦُ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻋَﻦْ ﻋَﻤَّﺎﺭِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﻤَّﺎﺭٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺮَﺃَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ( ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲ ﻭَﺭَﺿِﻴﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳﻨًﺎ ) ﻭَﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻳَﻬُﻮﺩِﻱٌّ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻮْ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﻫَﺬِﻩِ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻻَﺗَّﺨَﺬْﻧَﺎ ﻳَﻮْﻣَﻬَﺎ ﻋِﻴﺪًﺍ . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻧَﺰَﻟَﺖْ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡِ ﻋِﻴﺪٍ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡِ ﺟُﻤُﻌَﺔٍ ﻭَﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﻏَﺮِﻳﺐٌ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺤِﻴﺢٌ

অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত আছে যে, তিনি একদা – ”আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করে দিলাম ” ( সূরা মায়েদা ৩) এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন ! তখন উনার নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো,যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম !’ এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দুই ঈদ ছিলো – (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন !” (দলীল: তিরমীযি শরীফ-

কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৩৩১৮)


ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﺑُﻮ ﺧَﻴْﺜَﻤَﺔَ، ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ - ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻻِﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ - ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، - ﻭَﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﻬْﺪِﻱٍّ - ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ، ﻋَﻦْ ﻗَﻴْﺲِ ﺑْﻦِ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ، ﻋَﻦْ ﻃَﺎﺭِﻕِ، ﺑْﻦِ ﺷِﻬَﺎﺏٍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟِﻌُﻤَﺮَ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺗَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺁﻳَﺔً ﻟَﻮْ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﻓِﻴﻨَﺎ ﻻَﺗَّﺨَﺬْﻧَﺎ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻋِﻴﺪًﺍ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋُﻤَﺮُ ﺇِﻧِّﻲ ﻷَﻋْﻠَﻢُ ﺣَﻴْﺚُ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﻭَﺃَﻯَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﻭَﺃَﻳْﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣَﻴْﺚُ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﺃُﻧْﺰِﻟَﺖْ ﺑِﻌَﺮَﻓَﺔَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﺍﻗِﻒٌ ﺑِﻌَﺮَﻓَﺔ

অর্থ : আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি ... তারিক ইবনু শিহাব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী লোকেরা হযরত উমার আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত পাঠ করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা উৎসবের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। হযরত উমার আলাইহিস সালাম বললেন, আমি জানি, ঐ আয়াতটি কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় কোথায় অবস্থান করছিলেন (তাও জানি)। আয়াতটি আরাফার দিন নাযিল হয়েছিল; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আরাফাতেই অবস্থান করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ –কিতাবুত তাফসীর : হাদীস ৭২৪৪,নাসাঈ শরীফ শরীফ- কিতাবুল হজ্জ: হাদীস ৩০০২, মুসনাদে আহমদ ১৯০)


সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ

ﻋَﻦْ ﻋُﻘْﺒَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﺎﻣِﺮٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢﻗَﺎﻝَ "

ﺇِﻥَّ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﻨَّﺤْﺮِ ﻭَﺃَﻳَّﺎﻡَﺍﻟﺘَّﺸْﺮِﻳﻖِ ﻋِﻴﺪُﻧَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻹِﺱْﻻَﻡِ

অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন,নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪,আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯,তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)

উক্ত হাদীস শরীফে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।


হাদীস শরীফে আছে মুসলমানদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদদের দিনঃ

ﻟﻜﻞ ﻣﺆﻣﻦ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺷﻬﺮ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ ﺍﻭﺧﻤﺴﺔ ﺍﻋﻴﺎﺩ

অর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’ ( কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া )

রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ

ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻓَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ : ﻓَﺮْﺣَﺔٌ ﻋِﻨْﺪَ ﻓِﻄْﺮِﻩِ، ﻭَﻓَﺮْﺣَﺔٌ ﻋِﻨْﺪَ ﻟِﻘَﺎﺀِ ﺭَﺑِّﻪِ

ٌ অর্থ : হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি । একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময় ।'” (দলীল–বুখারী শরীফ – কিতাবুস সাওম, মুসলিম শরীফ কিতাবুস সাওম : হাদীস ১১৫৩,মিশকাত শরীফ , সুনানে নাসাঈ :২২১৫, রোজার অধ্যায়)


দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে। একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত।আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়।

ইফতিার দুই প্রকার –

(১) ইফতারে কুবরা।

(২) ইফতারে ছোগরা।

কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন।

এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে।এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন-

মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোটা ৩ টি।

শাওয়াল মাসে ৬ টি রোজা রোজা।

যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা।

এবং বাকি ১১ মাসে ৩ করে সুন্নত রোজা , মোট ৩৩ টি রোজা।

এই রোজাদার দের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!


আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —

বছরে ৫২ টি শুক্রবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ মাসে ৯ টি + মুহররম মাসে ২ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+৩+৩৩+৯+২+১+১)

= ১৮৪ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !


সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৪ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।


বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:

ﻗَﺎﻝَ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺃَﻧﺰِﻝْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻣَﺂﺋِﺪَﺓً ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺗَﻜُﻮﻥُ ﻟَﻨَﺎ ﻋِﻴﺪﺍً ﻟِّﺄَﻭَّﻟِﻨَﺎ ﻭَﺁﺧِﺮِﻧَﺎ ﻭَﺁﻳَﺔً ﻣِّﻨﻚَ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟﺮَّﺍﺯِﻗِﻴﻦَ

অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালামবললেন- হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন। এ দিন আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্যও তা হবে ঈদের দিন। (সূরা মায়িদা ১১৪)

শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদের দিন:

“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈদের দিন” (গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ ৩৬৫ পৃষ্ঠা)

দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে:

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻭُﻫَﻴْﺐٍ ﺍﻟْﻐَﺰِّﻱُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺃَﺣْﻤَﺪَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﺴَّﺮِﻱِّ ﺍﻟْﻌَﺴْﻘَﻼﻧِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑَﻘِﻴَّﺔُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﻤَﺮُ ﺑْﻦُ ﺭَﺍﺷِﺪٍ ﺍﻟْﻴَﻤَﺎﻣِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻛَﺜِﻴﺮٍ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺁﻟِﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " : ﺯَﻳِّﻨُﻮﺍ ﺃَﻋْﻴَﺎﺩَﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟﺘَّﻜْﺒِﻴﺮ

অর্থ: তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বণী দ্বারা সৌন্দর্য্যন্ডিত কর ( দলীল: মুজামুল আওছাত তাবরানী ৪৫০৯)

হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীসে ﺍﻋﻴﺎﺩ ( আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর ﺍﻋﻴﺎﺩ (আইয়াদ) শব্দ ঈদﻋﻴﺪ শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয় ﻋﻴﺪ (ঈদ) দু’ টি হলে ﻋﻴﺪﺍﻥ

(ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলে ﺍﻋﻴﺎﺩ (আইয়াদ) । সূতরাং হাদীস শরীফে আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে।

এই সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো,এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই? একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না দুই ঈদের বাইরে ঈদ নাই।


অতএব প্রমানিত হলো যে, শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত আরো অনেক ঈদ আছে ! এসব গুলা ঈদ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত ! সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফের খেলাফ ও কুফরীমূলক প্রমানিত হলো।

Saturday, September 29, 2018

বাইয়াত প্রসঙ্গ

সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের ফতওয়া হলো, কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার কাছে বাইয়াত হওয়া ফরয। এটাই হচ্ছে দলীলসম্মত এবং হাক্বীক্বী ফতওয়া। কেননা ইখলাছ অর্জন করা হচ্ছে ফরয। আর ইখলাছ হাছিল হয়ে থাকে কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার ছোহবত মুবারক উনার নূর এবং উনার দেয়া সবক্ব ক্বলবী যিকির করার দ্বারা। আর এসকল প্রতিটি বিষয়ই ফরযের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ফরয। উনার থেকে ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা ফরয। ক্বলবী যিকির-আযকার করা ফরয। উক্ত ফরযসমূহ প্রত্যেকটি কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার নাম ইখলাছ। অর্থাৎ প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে ইখলাছ অর্জন করতে হবে। অন্যথায় আমল করে ফায়দা বা মর্যাদা হাছিল করা তো দূরের কথা নাজাত লাভ করাটাই কঠিন হবে।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الناس كلهم هلكى الا الـمؤمنون والـمؤمنون كلهم هلكى الا العالـمون والعالـمون كلهم هلكى الا العاملون والعاملون كلهم هلكى الا الـمخلصون

অর্থ : সমস্ত মানুষ ধ্বংস মু’মিনগণ ব্যতীত এবং মু’মিনগণও ধ্বংস আলিমগণ ব্যতীত এবং আলিমগণও ধ্বংস আমলকারীগণ ব্যতীত এবং আমলকারীগণও ধ্বংস ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত। (মিরকাত শরীফ)

যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: ঈমানদারদেরকে আদেশ করা হয়েছে তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে ইবাদত বন্দিগী করে। (সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ: আয়াত শরীফ ৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى امامة الباهلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله لا يقبل من العمل الا ما كان له خالصا وابتغى به وجهه

অর্থ: “হযরত আবূ উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই আমল কবুল করবেন না, যা ইখলাছের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্য করা না হয়।” (নাসায়ী শরীফ, দায়লামী শরীফ)

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন আমল করা হলে তা হবে গইরুল্লাহ। তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কখনোই কবুলযোগ্য হবে না। তা যত বড় আমলই হোক না কেন। যার উদাহরণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সূরা মাঊন উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فويل للمصلين

অর্থাৎ, নামায আদায়কারীদের জন্য আফসুস তথা জাহান্নাম। (পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যা মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্য না থাকার কারণে জিহাদকারী জিহাদ করা সত্বেও, ক্বারী কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া সত্বেও এবং আলিম ইলম উনার প্রচার প্রসার করা সত্বেও এবং দানশীল দানের সমস্ত রাস্তায় দান করা সত্বেও তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, আমল করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ ইখলাছের সাথে আমল করতে হবে। তবেই সে আমলের দ্বারা-পরিপূর্ণ ফায়দা বা মর্যাদা লাভ করা সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اخلص دينك يكفيك العمل القليل

অর্থ: ইখলাছের সাথে আমল করো। অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম)

অতএব, প্রত্যেকের জন্য ইখলাছ অর্জন করা ফরয। আর ইলমুল ইখলাছ উনার অপর নামই হচ্ছে ইলমুল ক্বলব বা ইলমুত তাছাওউফ।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت الحسن رحمة الله عليه قال العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عز وجل على ابن ادم

অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, ইলম দু’প্রকার। একটি হচ্ছে ক্বলবী ইলম (ইলমে তাছাওউফ) যা উপকারী ইলম। অপরটি হচ্ছে যবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ) যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ)

ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “ইলম শিক্ষা করা ফরয বলতে বুঝায় ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ। অর্থাৎ উভয়টিই শিক্ষা করা ফরয।”

উল্লেখ্য, হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথমে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার কাছে মুরীদ হন এবং উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনারই ছেলে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে বাইয়াত হয়ে কামালিয়াত অর্জন করেন। সুবহানাল্লাহ! যা বিশ্বখ্যাত গায়াতুল আওতার ফী শরহে দুররিল মুখতার, সাইফুল মুকাল্লিদীন, ইছনা আশারিয়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফ উনার শরাহ মিরকাত শরীফ-এ হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মালিকী মাযহাবের ইমাম উনার ক্বওল উল্লেখ করেছেন যে-

من تفقه ولـم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولـم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না অর্থাৎ গুরুত্ব দিলনা, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টিই অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক।”

জানা আবশ্যক যে, ইলমে ফিক্বাহ অর্থাৎ ওযূ, গোসল, ইস্তিঞ্জা, নামায-কালাম, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত ইত্যাদি শিক্ষার জন্য ওস্তাদ গ্রহণ করা যেমন ফরয; সেটা মাদরাসায় গিয়েই হোক অথবা ব্যক্তিগতভাবে কোনো ওস্তাদের নিকট থেকেই হোক তা শিক্ষা করা ফরয। তদ্রূপ ইলমে তাছাওউফ উনার জন্যও ওস্তাদ গ্রহণ করা ফরয। আর এ ওস্তাদকেই আরবীতে ‘শায়েখ’ বা ‘মুর্শিদ’ বলা হয় আর ফারসীতে ‘পীর’ বলা হয়।

বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-

كل ما يترتب عليه الاثر من الفروض الاعيان فهو فرض عين

অর্থ : “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।”

হানাফী মাযহাব উনার মশহূর ফিক্বাহর কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ উনার মাঝে উল্লেখ আছে যে-

ما لايتم به الفرض فهو فرض

অর্থ : “যে আমল ব্যতীত কোনো ফরয পূর্ণ হয়না, উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ওই আমল করাও ফরয।”

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইলমে তাছাওউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয আর তা যেহেতু কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

শুধু তাই নয়, কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ছোহবত ইখতিয়ার করা বা উনাকে অনুসরণ করার নির্দেশ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصدقين.

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হও।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ছাদিক্বীন দ্বারা উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা যাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির, আমল-আখলাক্ব, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর ক্বায়িম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উভয় ইলমে তাকমীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন।

মোট কথা, যিনি বা যাঁরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী মত হয়েছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

واتبع سبيل من اناب الى

অর্থ : “যিনি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, উনার পথকে অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

অন্যত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من يهد الله فهو الـمهتد ومن يضلل فلن تـجد له وليا مرشدا

অর্থ : “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোনো ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়েখ) পাবেন না।” (পবিত্র সূরা কাহফ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়না, তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। নাঊযুুবিল্লাহ!

যার কারণে সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ আরো অনেকেই বলেছেন যে-

من ليس له شيخ فشيخه شيطان

অর্থ : “যার কোনো শায়েখ বা মুর্শিদ নেই, তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” নাঊযুবিল্লাহ! (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাওউফ তত্ত্ব)

আর শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيخ فى اهله كالنبى فى امته وفى رواية الشيخ لقومه كالنبى فى امته

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উম্মতের নিকট যেরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনিও উনার অধীনস্থদের নিকট তদ্রƒপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামি’, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ, তানযীহুশ শরীয়াহ, আল মীযান, আল জামিউছ ছগীর, আদ দুরারুল মুনতাশিরাহ ইত্যাদি)

অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, সেরূপ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দ্বারা মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لا يؤمن احدكم حتى يكون الله ورسوله احب اليه من نفسه وماله ووالده وولده والناس اجمعين.

অর্থ: “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কামিল মু’মিন হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হবেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত ত্বীবী)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ইরশাদ মুবারক করেন, তখন সেখানে হযরত উমর ইবনুল খ্বত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে আমি সবকিছু থেকে অধিক মুহব্বত করি কিন্তু আমার প্রাণের চেয়ে অধিক মুহব্বত এখনো করতে পারিনি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আপনি এখনও মু’মিনে কামিল হতে পারেননি।” একথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খ্বত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বাচ্চা শিশুদের ন্যায় কাঁদতে লাগলেন। (কারণ তিনি মনে করেছিলেন, যেজন্য তিনি পিতা-মাতা, ভাই-বোন, বাড়ী-ঘর, ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ইত্যাদি সব ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করেছেন, সে ঈমানই যদি পরিপূর্ণ না হয়, তাহলে এতকিছু ত্যাগ করার সার্থকতা কোথায়?

হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এই আকুতি দেখে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে কাছে ডাকলেন এবং নিজ হাত মুবারক উনার সিনার উপর রাখলেন (তাছাওউফের ভাষায়, ফায়িযে ইত্তিহাদী দিলেন)। সাথে সাথে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার এখন এরূপ অবস্থা হয়েছে যে, আমি একজন কেন? আমার ন্যায় শত-সহ সহস্র ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম আপনার জন্যে জান কুরবান করতে প্রস্তুত আছি।

একথা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! এতক্ষণে আপনি মু’মিনে কামিল হয়েছেন। সুব্হানাল্লাহ!

উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা প্রত্যেকেই কামিল বা পরিপূর্ণ মু’মিন হয়েছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবত ও মুবারক ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ উনার কারণেই। অন্য কোন আমলের দ্বারা মু’মিনে কামিল হননি। যদি হতেন তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বলতেন, আপনি অমুক আমল বেশি বেশি করুন তবেই মু’মিনে কামিল হবেন। কিন্তু তিনি তা না বলে উনাকে ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ্ মুবারক দিয়ে মু’মিনে কামিল বানিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে মশহূর ওয়াক্বিয়া বর্ণিত রয়েছে যে, মানতিকের ইমাম হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাদরাসায় লেখাপড়া শেষ করেছেন। তিনি কিতাবে পড়েছেন, ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাওউফ উভয় প্রকার ইলমই অর্জন করতে হবে। প্রত্যেকের জন্য সেটা ফরয। তিনি তো ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করেছেন মাদরাসায় গিয়ে। কিন্তু তখন পর্যন্ত উনার ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা হয়নি। তাই তিনি ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ গেলেন। গিয়ে বললেন, হুযূর! আমি আপনার কাছে বাইয়াত হতে এসেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম ফখরুদ্দীন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, কোন ফখরুদ্দীন, যিনি মানতিকের ইমাম? তিনি জবাব দিলেন, জী হুযূর! আমি সেই ফখরুদ্দীন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হযরত নজীবুদ্দীন কুবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন। অত:পর সবক দিয়ে বললেন, তোমার ভিতর মানতিকের ইলম পরিপূর্ণ। কাজেই, তুমি আগামী এক বছর যাহিরী কোন পড়া-শুনা না করে নিরিবিলি অবস্থান করে ইলমে তাছাওউফ বা তরীক্বতের সবক আদায় করতে থাক। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশ মুতাবিক তিনি নিরিবিলি অবস্থান করে তরীক্বতের সবক আদায় করতে লাগলেন। এরপর তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন মুর্শিদ ক্বিবলা তো পড়তে নিষেধ করেছেন। কিন্তু লিখতে তো নিষেধ করেননি। এ চিন্তা করে তিনি তরীক্বতের সবক আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তাফসীর লিখতে শুরু করলেন এবং বেশকিছু অংশ তাফসীর লিখলেন। যা তাফসীরে কবীর হিসেবে আজ সারাবিশ্বে মশহূর। বছর শেষে তিনি যখন উনার মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে দেখে বললেন, তোমার তো ইলমে মানতিক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বললেন, তোমার ভিতরে ইলমে তাছাওউফ প্রবেশ করাতে হলে ইলমে মানতি কমাতে হবে এবং এটা বলে তিনি ইলমে মানতিক কমানোর জন্য ফায়িয নিক্ষেপ করলেন। এতে হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভিতরে কটকট শব্দ হতে লাগলো। তিনি মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আমার ভিতরে কিসের শব্দ হচ্ছে। মুর্শিদ ক্বিবলা বললেন, তোমার ভিতরে মানতিকের যে অতিরিক্ত ইলম সেটা কমিয়ে দিচ্ছি। তিনি বললেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ করবেন, ফখরুদ্দীনের ফখরই তো ইলমে মানতিক। তা না কমানোর জন্য তিনি আরজু পেশ করলেন এবং মুর্শিদ ক্বিবলা উনা সবক নিয়ে নিজের এলাকায় চলে আসলেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনা ইজাযত নিয়ে তিনি স্বীয় এলাকায় তা’লীম-তালক্বীন, দর্স-তাদরীসের কাজ করতে লাগলেন। তিনি জানেন শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সাধারণ মুসলমান তো বটে, যারা আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, ছুফী-দরবেশ দাবীদার তাদেরকেও শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং অনেককে বিভ্রান্ত করেও ফেলে। এমনকি ইন্তিকালের মুহূর্তেও শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করার চেষ্টা করে থাকে। সেজন্য মানতিকের ইমাম হযরত ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুখতালিফ রিওয়ায়েত একশ থেকে এক হাজার দলীল প্রস্তুত করে রাখলেন যাতে ইন্তিকালের সময় উনাকে শয়তান ধোঁকা দিয়ে ঈমানহারা করতে না পারে। সত্যিই দেখা গেল, হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন ইন্তিকালের সময় উপস্থিত হলো তখন ইবলীস হাযির হয়ে গেল। হাযির হয়ে সে মহান আল্লাহ পাক দুজন বলে যুক্তি পেশ করতে লাগলো। আর ইবলীসের সে বাতিল যুক্তি খ-ন করে হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীল পেশ করতে লাগলেন। উনার সমস্ত দলীল শেষ হয়ে গেল তথাপি ইবলীসের বাতিল যুক্তি খণ্ডন করা গেলনা। এখন ঈমানহারা হয়ে ইন্তিকাল করার উপক্রম। তিনি এদিক-সেদিক তাকাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে উনার মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যুহর নামাযের ওযূ করছিলেন। তিনি ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এমন ভয়াবহ অবস্থা জানতে পেরে ওযূর পানি নিক্ষেপ করে বললেন, হে ফখরুদ্দীন রাযী! তুমি ইবলীসকে বল, বিনা দলীলে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন। বহু দূর থেকে যখন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিক্ষিপ্ত ওযূর পানি এসে উনার চেহারার উপর পড়লো এবং মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ক্বওল মুবারকের আওয়াজ উনার কানে এসে পৌঁছাল তিনি ইবলীসকে জানিয়ে দিলেন, হে ইবলীস! তুমি জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন। এটা আমি বিনা দলীলেই বিশ্বাস করি। তখন ইবলীস বললো, হে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী! আপনি আজকে আপনার মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উসীলায় বেঁচে গেলেন। অন্যথায় আপনাকে ঈমানহারা করে মৃত্যুমুখে পতিত করে চলে যেতাম।

এ ওয়াক্বিয়া দ্বারা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার উম্মত না হয়ে যেরূপ ইছলাহ ও নাজাত লাভ করা যায়না, তদ্রƒপ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হওয়া পর্যন্ত ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা ও নাজাত লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আর এ কারণেই জগদ্বিখ্যাত আলিম, আলিমকুল শিরোমণি, শ্রেষ্ঠতম মাযহাব, হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لولا سنتان لـهلك ابو نعمان

অর্থ : “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বৎসর না পেতাম, তবে আবূ নু’মান (আবূ হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেতাম।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া)

অর্থাৎ আমি হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি আমার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম অতঃপর হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম উনাদের নিকট বাইয়াত না হতাম, তবে আমি ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি কোনো কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বলবে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বলবে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ومن يعش عن ذكر الرحـمن نقيض له شيطنا فهو له قرين. وانـهم ليصدونـهم عن السبيل ويـحسبون انـهم مهتدون.

অর্থ : “যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)

তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বলবে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে।

আর এ কারণেই পৃথিবীতে যত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা আগমন করেছেন, উনাদের প্রত্যেকেই কোনো একজন শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং উনারা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গউছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ হযরত বড়পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব ‘সিররুল আসরার’ নামক কিতাবে লিখেন-

ولذالك طلب اهل التلقين لـحياة القلوب فرض

অর্থ : “ক্বল্ব্ জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য ‘আহলে তালক্বীন’ তালাশ করা অর্থাৎ কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।” অনুরূপ ‘ফতহুর রব্বানী’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।

তদ্রূপ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত কিতাব ‘ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত’ কিতাবে, ক্বাইউমুয যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মাকতুবাত শরীফ’ কিতাবে, আওলাদে রসূল, আশিকে নবী হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল ‘বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ’ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।”

অনুরূপ তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী ও তাফসীরে কবীর ইত্যাদি কিতাবেও উল্লেখ আছে।

মূলত কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি মুরীদের অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নৈকট্য মুবারক লাভ করানোর এক বিশেষ উসীলা বা মাধ্যম।

এ জন্যেই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভ করার জন্য ওসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে রূহুল বয়ান” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে-

الوصول لا يـحصل الا بالوسيلة وهى العلماء الـحقيقة ومشائخ الطريقة

অর্থ : “ওসীলা ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভ করা যায়না। আর উক্ত ওসীলা হচ্ছেন হাক্বীক্বী আলিম বা তরীক্বতপন্থী কামিল মুর্শিদ উনারা।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, প্রত্যেকের জন্য একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।

Thursday, September 27, 2018

নূর এ মুজাচ্ছাম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূর। ইমামগনের আকিদা থেকে।

BISMILLAHIR RAHMANIR RAHIM
রাসুলুল্লাহ 

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 

নূরে মুজাচ্ছাম। 

★ ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহ) বলেন,
আল্লাহ পাক নুর তবে অন্যান্য নুরের মত নন। আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর রুহ মুবারক হচ্ছে তাঁর (আল্লাহর) নুরের ঝলক। আর ফেরেশতাগন হচ্ছেন তাঁর (রাসূলের) নুরের শিখা। যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
"আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নুর সৃষ্টি করেছেন আর আমার নুর থেকে আল্লাহ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।
Reference :
ইমাম মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : ২১ পৃ:

★ ইবনে জাওজী (রহ) বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী : "আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নুর মুবারক সৃষ্টি করেছেন আর আমার নুর থেকে কুল কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।
Reference :
ইবনে জাওজী : বয়ানুল মীলাদুন্নবী (সা) : ২২ পৃ

★ ইমাম আব্দুল গনী নাবলুসী (রহ) হযরত যাবির (রা) এর সনদ সম্পর্কে বলেন,
"রাসুলুল্লাহ (সা) এর নুর মুবারক থেকে সবকিছু সৃষ্টি। উক্ত বর্নিত হাদিসটির সনদ সহিহ।
Reference :
ইমাম নাবলুসী : হাদিকাতুল নাদিয়া : ২/৩৭৫ পৃ:

★ বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রহ) 
সুরা যুখরুফ ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় একটি হাদিস উল্লেখ করেন,
ইমাম জাফর সাদেক (রহ) বলেন,
আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নুরে মুহাম্মাদী কে সৃষ্টি করছেন।
Reference :
ইসমাইল হাক্কী : তাফসীর রুহুল বয়ান : ৮/৩৯৬ পৃ: সুরা যুখরুফ : ৮১

★ হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী (রহ) বলেন,
পরম গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত আল্লাহ পাক বলেছেন,
আমি আমার নিজ জাতের কুদরতী জামালের নুর হতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুহ মোবারক সৃষ্টি করেছি।
এর প্রমান হল রাসুলুল্লাহ (সা) এর হাদিস আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আমার নুর মুবারক।
Reference :
ইমাম শাতনুফী : বাহজাতুল আসরার : ১২ পৃ

★ ইমাম বদরউদ্দিন আঈনি (রঃ) বলেনঃ
,”আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। “
Rederence:
[Umdat ul Qari, Sharh Sahih Bukhari, Volume No. 15, Page No. 109]
_________________________________________________

★ ইমাম যুরকানী (রহ) বলেন,
হাদিসে পাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে "আকল" "কলম" ও " আমার নুর" তিনটি বস্তু মুলত নবীকুল সম্রাট এর নুর মুবারককেই বুঝানো হয়েছে। সর্বাগ্রে, নিরেট ও নির্ভেজাল অস্তিত্বময় একমাত্র তারই সত্ত্বা।
Reference :
শরহে মাওয়াহিব : ৭ম খন্ড : ২৫৪ পৃ

★ ইমাম শারানী (রহ) বলেন,
নুর কিংবা আকল পরস্পর বৈপরিত্য নেই। এগুলো হাকিকতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বহুমুখী পরিচিতি।
Reference :
ইমাম শারানী : ইয়াকুত ওয়াল জাওয়াহির : ২য় খন্ড ২০ পৃ

★ইমাম যুরকানী (রহ) বলেন, 
لم يكن له صلى الله عليه و سلم ظل في شمس و لا قمر لانه كان نورا-
অর্থ : “সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারকের ছায়া পড়তোনা। কেননা, তিনি ছিলেন আপদমস্তক নূর”।
Reference :-
যুরকানী শরীফ ৪র্থ খন্ড, ২২০ পৃ

★ইমাম হাফেজ আবুল ফযল ক্বাযী আয়ায (রা) বলেন-
و قد سماه الله تعالى فى و سراجا منيرا فقال تعالي قد جاءكم منالله نور و كتاب مبين و قال تعالى انا ارسلناك شاهدا و مبشيرا و نذيرا و داعيا الى الله باذنه و سراجا منيرا و قال فى غير هذا الموضع انه كان لاظل لشخصه في شمس و لا قمر لانه كان نورا الذباب كان لا يقع على جسده و لا ثيابه-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা কোরআন করীমে তাঁর নাম রেখেছেন নূর ও সিরাজুম্‌ মুনীর। যেমন তিনি ফরমায়েছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। আরো ফরমায়াছেন, আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি হাজের ও নাজেররূপে, আল্লাহর অনুমক্রিমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজুম মুনীর ) রূপে। নিশ্চয়ই তাঁর ছায়া ছিল না।
না সূর্য়ালোকে না চন্দ্রালোকে কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীর ও পোশাক মোবারকে কখনও মাছি পর্যন্ত বসত না।
Reference :-
শিফা শরীফ ২য় খন্ড ২৪২ পৃ

★ইমাম সুয়ুতী রাহঃ তার কিতাব খাসাইসুল কুবরা কিতাবে বর্ননা করেন,
اخرج ابن ابي عمر العدني فى مسنده عن ابن عباس ان قريشا كانتنورا بين يدي الله تعالى قبل ان يخلق ادم بالفى عام يسبح ذالك النور و تسبح الملائكة بتسيحه فلما خلق الله ادم القي ذالك النور فى صلب قال رسول الله صل اله عليه و سلم فاهبطنى الله الى الارض فى صلب ادم (عليه السلام) و جعلنى فى صلب نوح عليه السلام و ق ف بى فى صلب ابرهيم عليه السلام ثم لم يزل الله ينقلبى من الصلاب الكريمة و الارحام الطاهؤة حتى اخرجنى من بين ابوى لم يلتقيا على سفاح قط-
অর্থ : হযরত ইবনে আলী ওমর আল-আদানী স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার তারতম্যটুকুও দেখাতে লাগলেন। তিনি ( আদম আলাইহিস সালাম ) তাদের মধ্যে শেষপ্রান্তে একটা উজ্জ্বল নূর দেখাতে পেলেন। তখন তিনি বললেন,” হে রব! ইনি কে? ( যাকে সবার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত নূর হিসাবে দেখতে পাচ্ছি?) উত্তরে মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করলেন,” ইনি হলেন তোমার পুত্র-সন্তান হযরত আহমদ মুজ্‌তবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি হবেন আমার দরবারে প্রথম সুপারিশকারী (ক্বিয়ামতেরদিনে)।
Reference :-
আল-খাসাইসুল কুবরা ১ম খন্ড, ৩৯ পৃ

★মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী রহঃ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন,

 “নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  মায়ের গর্ভেই যে নূর ছিলেন,  এর দলীল হচ্ছে হযরত যাকারিয়া (রা) বর্ণিত হাদীস” – নবী করিম (সাঃআঃ) ৯ মাস মাতৃগর্ভে ছিলেন,এ সময়ে বিবি আমেনা (রাঃ আঃ) কোন ব্যথা বেদনা অনুভব করেননি বা কোন রোগে আক্রান্ত হননি এবং গর্ভবতী অন্যান্য মহিলাদের মত কোন আলামতও তাঁর ছিলনা। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার দেহ মোবারক মাতৃগর্ভে নূর ছিল। হযরত ওসমান (জ্বীন্ নূরাইন) দয়াল নবীর দুই কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন, একজন কন্যার মৃত্যুর পর আর তাই তো হযরত ওসমানকে বলা হয় (জ্বিন নূরাইন) অর্থাৎ দুই নূরের অধিকারী। (সুবহান-অল্লাহ্ )

★ইমাম বদরউদ্দিন আঈনি রাহঃ বলেনঃ
روى أحمد والترمذي مصححا من حديث عبادة بن الصامت مرفوعاً أول ما خلق الله القلم ثم قال أكتب فجرى بما هو كائن إلى يوم القيامة واختاره الحسن وعطاء ومجاهد وإليه ذهب إبن جرير وابن الجوزي وحكى ابن جرير عن محمد بن إسحاق أنه قال أول ما خلق الله تعالى النور والظلمة ثم ميز بينهما فجعل الظلمة ليلاً أسود مظلماً وجعل النور نهاراً أبيض مبصراً وقيل أو ما خلق الله تعالى نور محمد قلت التوفيق بين هذه الروايات بأن الأولية نسبي وكل شيء قيل فيه إنه أول فهو بالنسبة إلى ما بعدها
ইমাম আহমদ এবং ইমাম তিরমিজি (রঃ) মারফু হাদিস সহিহ সনদ সহ ইবাদা বিন সামিত থেকে বর্ননা করে প্রমাণ করেন যে,” আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন এবং একে বলল, লিখ এবং এটা বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত সবকিছু লিখল।হাসান,আতা,­ মুজাহিদ ও এটা অবলম্বন করেছেন। ইবন জারির এবং ইবন জাউজির ও এমন মাজহাব ছিল। যেখানে ইবন জারির, মুহাম্মদ বিন ইসহাক থেকে বর্ননা করেন যে,”আল্লাহ সবকিছুর পূর্বে আলো (নূর) এবং আঁধার সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের মদ্ধে পৃথকীকরণ করেন।এখানে আরও বলা আছে যে,”আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। “
Reference;
[Umdat ul Qari, Sharh Sahih Bukhari, Volume No. 15, Page No. 109]

★আশরাফ আলী থানভী সাহেব লিখেন, 

“এ কথা সবাই জানে যে আমাদের হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারক এর কোনো ছায়া ছিলনা কেননা ওনার আপাদ-মস্তক নূরের।
reference :-
আশরাফ আলী থানভী~শোকরে নিয়ামত ৩৯ পৃষ্ঠা।

এছাড়াও উনার বিখ্যাত কিতাব “Nashr ut Teeb fi Dhikr il Nabbiyal Habeeb” এ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নূর হিসেবে অকপটে স্বীকার করেছেন।

★ঈমাম-এ-আজম হযরত আবু হানিফা (রাহ:) বলেন,

” ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনে হলেন এমন নূর যার আলোতে একটা পূর্ণ চন্দ্র আলোকিত হয় & আপনার সুন্দর্য ও মার্জিত ভাবের দারা আপনে একটা আলোকিত সূর্য।
Reference;
(Qasidaul Nu’maan.)

★Imam Tirmidhi wrote that,

 when Prophet (May Allah bless him and grant him peace) smiled, it seemed as if Noor was coming from his teeth.
Reference;
(Chap on Shamaa’il Tirmidhi)

★Mullah Ali Qari (rah) beautifully said;

الأوّل الحقيقي هو النور المحمدي على ما بينته في المورد للمولد

Translation: The first reality is the “NUR-AL-MUHAMMADI” as I have mentioned in my book Al-Mawrid lil-Mawlid.
Reference:::
[Mullah Ali Qari in Mirqat, Sharh al Mishqaat (1/289), Published by Dar ul Fikr, Beirut, Lebanon]

তিনি আরো বলেন, Prophet Sallallaho Alaihi Wasallam said: “The First thing which Allah created was my Nur” and It has also come in another report that It was his “RUH” and both of them “HAVE SAME MEANING BECAUSE SPIRITS ARE CREATED FROM NUR.

Reference:::
[Mullah Ali Qari in Mirqat, Sharh al-Mishqaat (1/290), Published by Dar ul Fikr, Beirut, Lebanon.

★হযরত গাউসুল আজম দস্তগীর Sirr-al-Asrar কিতাবে বলেছেন:-
Allah created First the Ruh of Muhammad Sallallaho Alaihi Wasallam & Also Another narration that.
★Allah created first the Noor of Muhammad Sallallaho Alaihi wasallam.
★Both that means Haqiqate Mahammadi Sallallaho Alaihi wasallam.
Reference;
[Al-Sirrul Israr]

★Ibn-al-Jawzi narrates that the Noor of the Prophet Sallallaho ‘alaihi wasallam would overcome the light of both the sun and the lamp.


[Al-wafa Ibn Jawzi Chapter Al Wilaada]“norim min noorallahi” → অর্থাৎ “যিনি আল্লাহ্‌ পাকের উজ্জ্বল জ্যোতি/ নুর। 
Post created by "Masm Billah Sany" (ঈষৎ সম্পাদিত)

Sunday, September 16, 2018

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমাদের মত মানুষ?


‘রাসূল (দ:) কি আমাদের মত মানুষ ?

সহজ সরল জবাব

প্রথম কথা: রাসূল (দ:) কি মানুষ?

হ্যাঁ। তিনি গঠনে, আকারে, প্রাকৃতিকতায় মনুষ্যরূপের অধিকারী।

দ্বিতীয় কথা: রাসূল (দ:) কি আমাদের মত মানুষ?

না। আল্লাহ ঈমানদার তথা বিশ্বাসীদের মানা করেছেন আমাদের মত মানুষ বলতে।

’তোমরা এই রাসূল (দ:)-কে সেইভাবে সাব্যস্ত করো না, যেভাবে পরস্পরকে সাব্যস্ত/আহ্বান করো’।

আর ক্বাফিরদের সাথে তর্কে না জড়িয়ে রাসূল (দ:)-কে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলতে বলেছেন, ’আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের ‘উপমায়’ মানুষ আকৃতিসম্পন্ন, আমার প্রতি ওয়াহি (ঐশী বাণী) নাজিল হয়’।

এখন, কোন্ আয়াত আমাদের প্রতি প্রযোজ্য?

আমরা কাফির হলে কাফিরের আয়াত প্রযোজ্য। কাফিররা বলবে নবী তাদের মত মানুষ। আর মুমিনরা বলবেন, নবী (দ:) আমাদের মুমিনদের কারোর মত-ই নন।

তিনি চল্লিশ দিন না খেয়ে থাকতেন। মানুষ ২৩ দিনের বেশি না খেয়ে, না পান করে বাঁচে না। তিনি আমাদের মত মানুষ নন।

তিনি যত জগৎ আছে, সমস্ত জগতের প্রতি আল্লাহ যা করুণা পাঠান, সেই করুণার মাধ্যম। কোন সাধারণ মানুষ বা অসাধারণ মানুষ এই পর্যায়ে পড়েন না।

তৃতীয় কথা: রাসূল (দ:)-কে কি কুরআন-হাদীসে নূর বলা হয়েছে?

হ্যাঁ। তাঁকে ‘সিরাজাম মুনীরা’ বলা হয়েছে। সিরাজ মানে জ্বলন্ত। জ্বলজ্বলে। মুনীর মানে আলোকোজ্জ্বল। সিরাজাম মুনীরা মানে প্রোজ্জ্বল প্রদীপ।

চতুর্থ কথা: তাঁকে কি আল্লাহর পক্ষ থেকে ’নূর’ (জ্যোতি) বলা হয়েছে?

হ্যাঁ। তাঁকে হত্যাচেষ্টার পর বলা হয়েছে, ’তারা চায় আল্লাহর পক্ষ থেকে নূরকে (নূরুল্লাহ) ফুঁ দিয়ে নিভানোর চেষ্টা করতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়’।
সূরা নূর-এ তাঁর মোবারক শরীরের বর্ণনা করে তাঁর ক্বলবের ভিতরে আল্লাহর নূর থাকার কথা বলা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ’নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছেন এক নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব’।

পঞ্চম কথা: কুরআনে কি তাঁকে মনুষ্যরূপী বলা হয়েছে?

হ্যাঁ। মানুষের ’উপমায়’ (মাসালু) বলা হয়েছে। তিনি জাগতিক গঠন ও প্রকৃতিতে মনুষ্য আকৃতি ও প্রকৃতির। কিন্তু তাঁর সাথে দ্বিতীয় কোন মানুষের তুলনা চলে না। যেমন হযরত ঈসা (আ:) দ্বিতীয় কোন মানুষের সাথে তুলনীয় নন। তিনি রূহুল্লাহ। যেমন আদম (আ:) দ্বিতীয় কোন মানুষের সাথে তুলনীয় নন; তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ফুৎকারপ্রাপ্ত এবং সকল মানুষের পিতা। তেমনি রাসূল (দ:) দ্বিতীয় কোন মানুষের সাথে তুলনীয় নন। তিনি জাগতিক প্রকৃতিতে মনুষ্য আকৃতির হয়েও ’নূরুল্লাহ’।

ষষ্ঠ কথা: কুরআনে কি তাঁকে বারবার মানুষ বলা হয়েছে?

না। আল-কুরআনে বেশিরভাগ জায়গাতেই তাঁকে ‘আর সব মানুষের মত মানুষ’ বলেছে শুধু কাফিররা। কাফিরদের জবানিতে এই কথাটা বারবার বলা হয়েছে।

সপ্তম কথা: রাসূল (দ:) নূর, এই বিষয়ক কোন অকাট্য, অনস্বীকার্য প্রমাণ কি রয়েছে?

হ্যাঁ। ইসলামে তা-ই অকাট্য প্রমাণ, যা আল-কুরআনে থাকে এবং সরাসরি কোন সাহাবী (রা:) দ্বারা তা সত্যায়িত হয়ে হাদীসে/রওয়ায়াতে পরিণত হয়।
কুরআনের প্রথম ব্যাখ্যাকার হলেন রাসূল (দ:)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রা:)-এর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ (রা:), যিনি শিশুকাল থেকে রাসূল (দ:)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন এবং রাসূল (দ:)-এর কথা অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম তাফসীরকারী।

পৃথিবীর প্রথম লিখিত কুরআন ব্যাখ্যাকারী (তাফসীরকারী) যদি স্বয়ং কোন সাহাবী (রা:) হন, যিনি রাসূল (দ:)-এর সাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন, তাহলে তাঁর লিখিত কথা ইসলামের অনস্বীকার্য বিষয়।

তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রা:)-এ লেখা রয়েছে, “তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান কিতাব, অর্থাৎ, আল-কুরআন এবং ’নূর’, অর্থাৎ, এই রাসূল (দ:) এসেছেন। স্বয়ং এই
সাহাবী (রা:)-এর লেখার উপরে কোন ব্যাখ্যা চলে না।

অষ্টম বিষয়: রাসূল (দ:) কি গাঠনিকভাবেও নূর?

হ্যাঁ, এই ধরনের অনেকগুলো হাদিস রয়েছে।

নবম বিষয়: নূর হয়েও কি কারো পক্ষে মনুষ্য আকৃতিতে থাকা ও মানুষের সবকিছুতে যুক্ত থাকা সম্ভব?

হ্যাঁ। নূর বা আলো হল ফোটনের ওয়েভ বা ফোটনের প্যাকেট। ফোটন কাঁচা শক্তি। সৃষ্টির যে কোন বস্তুকণাকে বিশ্লিষ্ট করলে অণুতে এসে ঠেকে। অণুর বিশ্লিষ্টকরণে ইলেক্ট্রন বা প্রোটন-ই সর্বনিম্নভরের কণা। ইলেক্ট্রন আর প্রোটনের কোয়ার্ক লেভেলে ভাঙলে শুধু শক্তি থাকে। শক্তির আট রূপের এক রূপ আলো। শক্তি একত্র হয়ে যদি বস্তু তৈরি হতে পারে, আলোর সাথে মানব শরীরের কোন অসামঞ্জস্য নেই।

দশম বিষয়: আমরা কি তাকে আমাদের মত মানুষ সাব্যস্ত করতে পারব?

না। মানবীয়তায় আগত হিসাবে মনুষ্যরূপী সাব্যস্ত করতে পারব। কিন্তু দ্বিতীয় কারো সাথে তুলনা করতে পারব না। আমাদের মত মানুষ সাব্যস্ত করতে পারব না।
কারণ, তাঁকে শাহিদ তথা সাক্ষ্যদাতা বলা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক উম্মাহর সব কাজের শাহিদ বা সাক্ষী হলেন সেই উম্মাহর নবী ও রাসূল। এবং জগতের সমস্ত উম্মাহর নবী ও রাসূলের সকল কাজের উপর সাক্ষ্যদাতা হিসাবে রাসূল (দ:)-কে উপস্থিত করা হবে। যিনি দেখেন না, তিনি সাক্ষ্যদাতা হতে পারেন না; অধিকন্তু রাসূল (দ:)-কে সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী হিসাবে ক্ষমতাপ্রদান করা হয়েছে; এবং তিনি যে সশরীরে জীবিত আছেন তা কুরআনের তিনটি আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে; তার মধ্যে প্রথমটিতে বলা হয়েছে, ’আল্লাহর পথে প্রাণপাতকারী (শহীদদের) মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক-প্রাপ্ত হন।’ আর শহীদের মর্যাদা সিদ্দিকবৃন্দ তথা বুযূর্গানে দ্বীন ও আম্বিয়া (আ:)-মণ্ডলীর পরে; তা কুরআনে আছে ’মিনান নাবিয়্যিনা ওয়াস সিদ্দিকিনা ওয়াশ শুহাদায়ি ওয়াস স্বালিহিন’, এই আয়াতে।

মহানবী (দ:)-কে পূর্বাপার সম্ভাব্য সবচে বেশি বিষয় জানানো হয়েছে। ‘আল্লাহ ছাড়া অজ্ঞাতবিষয়ের জ্ঞান কারো নেই। কিন্তু তিনি প্রিয়জনদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাঁকে যতটা ইচ্ছা জ্ঞাত করেন’ – এই আয়াতে আল্লাহর প্রিয়জনের অজানা বিষয়ে দখলের কথা বলা হয়েছে এবং বুখারী-মুসলিম থেকে শুরু করে ৫৬ টা হাদিস গ্রন্থের হাদিসে দেখা যায়, রাসূল (দ:) এক ভোর থেকে শুরু করে মসজিদে সেদিন সন্ধ্যার মধ্যে কিয়ামাত পর্যন্ত যা যা ঘটবে এমন সব ঘটনাবৃত্তান্ত বর্ণনা করেন এবং প্রতিটা ঘটনায় খোদাদ্রোহী তথা দাজ্জালদের কথা বর্ণনা করেন এবং সেই বর্ণনায় রাসূল (দ:) ৩০ জনেরও বেশি ভবিষ্যত খোদাদ্রোহীর নাম, তাদের পিতার নাম ও তাদের গোত্রের নাম পর্যন্ত বর্ণনা করেন। এই হাদিস হযরত উমার (রা:)-সহ ১৫ জনেরও বেশি সাহাবা (রা:) বর্ণনা করেছেন।

এইসব গুণ সাধারণ মানবিক গুণ নয়, বরং অতিমানবিক আল্লাহপ্রদত্ত অসাধারণ গুণ। তাঁকে তাই কোন মানবিক তুলনায় আনা সম্ভব নয়।

একাদশ বিষয়: তিনি কী, এটা কি গুরুত্বপূর্ণ?

হযরত ঈসা (আ:)-এর ’রূহুল্লাহ’ হওয়া এবং পিতা ব্যতিরেকে জন্মানো, এটা যেমন মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, হযরত আদম (আ:)-এর মানবজাতির আদি-পিতা হওয়া, এই আকীদা-বিশ্বাস যেমন মুসলিমের জন্য জরুরি, তার চেয়েও ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপন রাসূল (দ:)-এর বিষয়ে সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ধারণ করা।
মুসলিম হয়ে থাকলে এই সঠিক বিশ্বাস অন্তরে পোষণ ঈমানেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

বটমলাইন বা মোদ্দা কথা হচ্ছে, রাসূল (দ:)-কে যখন আমরা মনুষ্যরূপী বলব তখন সেই তুলনায় নিজেকে মানুষ বললে শেষ। আর নিজেকে যখন মানুষ বলব তখন রাসূল (দ:)-কে সাধারণ মানুষ না বলা-ই ভাল। কারণ, তিনি-ই ঈমান। আর ঈমান সামান্য কথায় বিকিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। প্রতিটা মানুষ-ই জানেন, তার মনের ভিতরে কী পরিমাণ পাপ ঘুমে বা জাগরণে, স্থির অবস্থায় বা ভ্রমণে, মসজিদে কী ডাস্টবিনে – সর্বত্র-ই পুঞ্জিভূত থাকে! এই মহাপাপী চরম জঘন্য মানুষ যদি আল্লাহর রাসূল (দ:)-কে নিজের মত মনে করে, তাহলে তার আর মুসলিম দাবি না করাই ভাল।

Thursday, September 13, 2018

জানাজার নামাজের পর দোয়ার বিধান

♥ "জানাযার নামাজের পর হাত তুলে দোয়া প্রসংগে " আপত্তির জবাব ♥

<=================================>

→অতি দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে!


→ইদানিংকালে জানাযার নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করাকে এক শ্রেণীর মানুষ বিদআত বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার সামান্য চেষ্টা করছি মাত্র।

→জানাজার পর মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য দো’আ করা জায়েজ এবং সুন্নাত নিন্মোক্ত দলিল সমুহ অবলোকন করলেই আমরা জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ :-


♣দলীল নং- ০১: পবিত্র কোরআনে ৩০পারা,৯৪ নং সুরা ইনশিরাহ,৭-৮ নং আয়াত, মহান আল্লাহ

রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, 

ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ- ﻭﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﺎﺭﻏﺐ – 

আর যখন আপনি অবসর হবেন, পরিশ্রম করুন এবং আপনার প্রতিপালকের দিকে মনোনিবেশ করুন। এ আয়াতের তাফসীরে

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) বলেন, ﻋﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ

ﻭﺍﻟﻀﺤﺎﻙ ﻭﻣﻘﺎﺗﻞ ﻓﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ‏( ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ ‏) ﺍﻯ ﺍﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ

ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺔ ﻓﺎﻧﺼﺐ ﺍﻟﻰ ﺭﺑﻚ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻭ ﺍﺭﻏﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻓﻰ

ﺍﻟﻤﺴﺂﻟﺔ ﻳﻌﻄﻴﻚ – অর্থাৎ হযরত কাতাদাহ, দাহ’হাক 

মাকাতিল (রাঃ) আনহুম আল্লাহ পাকের এই বানী সম্পর্কে বলেন :- ﻓﺎﺫﺍ ﻓﺮﻏﺖ ﻓﺎﻧﺼﺐ এর মর্মার্থ হল

আপনি যখন ফরয সালাত শেষ করবেন, তখন নিজেকে দো’আ করার জন্য নিয়োজিত করে

নেবেন এবং প্রার্থনা করার জন্য তারই প্রতি মনোনিবেশ করবেন। তিনি আপনাকে প্রদান করবেন। বর্ণিত আয়াতের তাফসীরকারকদের মতে, নামাযের দোয়ার কথা বলা হয়েছে। 

সুতরাং জানাযা নামায যেহেতু এক প্রকার ফরয নামায যদি ও তা ফরযে কেফায়া। সেহেতু জানাযা নামাযের পর দো’য়া করা ও প্রমানিত।

♣দলীল নং- ০২: ﻋﻦ ﺍﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﻴﻞ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ

ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻱ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺍﺳﻤﻊ ؟ ﻗﺎﻝ ﺟﻮﻑ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﺍﻻﺧﺮﻭﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﻜﺘﻮﺑﺎﺕ –

অর্থাৎ হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিঙ্ঘেস করা হলো

যে, কোন মুহূর্তের দো’আ অধিক কবূল হয়ে থাকে?

তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন রাতের শেষাংশের দো’আ

(তাহাজ্জুদের সময়) এবং ফরয নামায সমূহের পরের দো’আ (দ্রুত কবূল হয়ে থাকে)”। 

যেহেতু জানাজার নামাজ ফরযে কেফায়ার তাই এ নামাযের পরে ও

দো’আ করা এ হাদীসের ভিত্তিতে জায়েয, যেভাবে পাচঁ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরেও জায়েয।


মিশকাত শরীফ, ১৬৭৪ নং হাদিস:

♣দলীল নং- ০৩: ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ

ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ (رواه ابو داود)

– অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি

বলেছেন যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেলবে তখন সাথে সাথেই (বিলম্ব না করেই) তার জন্য একটি খাস দো’আ কর। 

(ইবনে মাজাহ, হা/ ১৪৯৭ ও আবু দাউদ, হা/ ৩১৯৯)

এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হল যে, জানাযা নামাযের পর পরই মৃত ব্যক্তির জন্য খাস করে দো’আ

করতে হবে। জানাযা নামাযের পর দো’আ অস্বীকারকারীগণ এ হাদীসের উল্লেখিত দোয়াকে নামাযের মধ্যে পঠিত দো’আ অথবা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরস্থানে দো’আ করাকে বুঝাতে আপ্রান চেষ্টা চালায়। 

→তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আলোচ্য হাদীসে ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ

শব্দের মধ্যে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ কি? আল্লামা সিরাজুদ্দীন উসমান (রহঃ) এর নাহু শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব হেদায়াতুন নাহুতে হরফের

অধ্যায়ে ﻓﺎﺀ হরফের অর্থ লিখা হয়েছে ﺍﻟﻔﺎﺀ ﻟﻠﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻼ

ﻣﻬﻠﺔ ﻧﺤﻮ ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻓﺒﺮﻫﺎﻥ ﻭ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻄﻔﻴﻞ ﻣﺘﻘﺪﻡ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ ﻣﺘﺎﺧﺮﺍ ﺑﻼ

ﻣﻬﻠﺔ অর্থাৎ ﻓﺎﺀ হরফটি বিলম্বহীন পর্যায়ক্রমিক

অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন ﻗﺎﻡ ﻃﻔﻴﻞ ﻭﺑﺮﻫﺎﻥ অর্থ তুফাইল

দাঁড়ালো অতঃপর বুরহান দাঁড়ালো। এ উদাহরনটিতে তুফাইলের দাঁড়ানো বুরহানের পূর্বে হবে এবং বুরহানের দাঁড়ানো বিলম্বহীন ভাবে তুফাইলের পরে হবে। অর্থাৎ বুরহানের দাঁড়ানো

তুফাইলের পূর্বে বা তার সাথে হবে না। এমনকি তুফাইলের দাঁড়ানোর অনেক পরে ও হবে না বরং তুফাইল দাঁড়ানোর পর তার সাথে সাথেই বুরহান দাঁড়াবে।

→সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফের ইবারত হল- ﺍﺫﺍ ﺻﻠﻴﺘﻢ

ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﻓﺎﺧﻠﺼﻮﺍ ﻟﻪ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ অর্থাৎ যখন তোমরা মৃত

ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ে ফেল। অতঃপর তাঁর জন্য খাস করে দো’আ কর। আলোচ্য ইবারতে প্রথমে নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে। তার পর

দো’আ করার জন্য বলা হয়েছে। তাই উক্ত দোয়াটি নামাযে পঠিত দো’আ হিসেবে গন্য হবেনা। নামাযের পরেই বিলম্ব না করে দো’আ করতে হবে।

এবং নামাযের পর দাফন পর্যন্ত বিলম্ব করে তার পরে পঠিত দো’আ হিসেবে ও উক্ত দো’আটি যদি

দাফনের পরবর্তী দোআ হিসেবে বুঝানো হত তাহলে হাদীস শরীফের ইবারতে ﻓﺎﺀ হরফ ব্যবহার

না করে ﺛﻢ (ছুম্মা) হরফ ব্যবহার করা হত কারণ ছুম্মা হরফের অর্থ হলো ﺍﻟﺘﺮﺗﻴﺐ ﺑﻤﻬﻠﺔ অর্থাৎ

বিলম্বের সহিত পর্যায়ক্রম। যেমন বলা হয়। ﺩﺧﻞ ﺍﻧﻮﺍﺭ

ﺛﻢ ﻣﺤﻤﻮﺩ অর্থাৎ আনওয়ার প্রবেশ করল অতঃপর

বিলম্ব করে মাহমুদ প্রবেশ করল। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ দুরুসুল বালাগাত কিতাবের প্রনেতা আল্লামা বেগ নাসেফ, মুহাম্মদ বেগ দিয়াব,

মুস্তফা তাম্মুম ও সুলতান আফেন্দী (রাহঃ) বর্ননা করেছেন”। অনুরূপ ফা হরফের অর্থ কাফিয়া কিতাবের প্রনেতা আল্লামা জালালুদ্দীন ইবনে

হাযেব (রাহঃ) বর্ননা করেছেন”। অনুরূপ (ফা) হরফের অর্থ নুরুল আনওয়ার কিতাবের ব্যাখ্যাকার

আল্লামা মোল্লা জীউন (রাহঃ) বর্ননা

করেছেন”।

→তাই বুঝা গেল রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযা নামাযের পর পরই দোআ করার জন্য আদেশ করেছেন। আর যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদেশের বিপরীতে কথা বলে তাদের

ঈমান আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।


♣দলীল নং- ০৪: প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (রাহঃ) তার ফাতাওয়ার কিতাবে

মুতার যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করেন। হযরত আব্দুল জাব্বার বিন উমারাহ (রাঃ) তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী বাকরাহ (রাঃ) থেকে তিনি

বলেন যখন (শামদেশে) মুতানামক স্থানে (মুসলমান এবং কাফের) যুদ্ধ শুরু করল। তখন রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (মদিনা শরীফের মসজিদে নববীর) মিম্বরে বসা ছিলেন, তখন তার এবং শ্যাম দেশের

মধ্যবর্তী স্থানের সকল আবরন দূর করে উন্মক্ত করে দেয়া হল। তিনি মুতার যুদ্ধ সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে

লাগলেন। অতঃপর রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ) (ইসলামের) পতাকা হাতে নিয়েছেন। কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।আল্লাহর হাবীব (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন ও (উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন তোমরা তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি জান্নাতে প্রবেশ করে সেখানে ঘুরাফেরা

করছেন। অতঃপর হযরত জাফর ইবনু আবী তালেব (রাঃ) পতাকা নিজ হাতে নিলেন কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ

ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍ ﻟﻪ অর্থাৎ অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহ)

তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযা নামায পড়লেন এবং তার জন্য দোআ করলেন লোকদেরকে ও তার মাগফিরাতের জন্য দোআ

করতে বললেন”।


♣দলীল নং- ০৫: মুতার যুদ্ধে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীরা জানাযার নামাযের পর কী করলেন তা ইমাম

বায়হাক্বী (রাহঃ) সুন্দর করে সহীহ সনদে এভাবে বর্ননা দিচ্ছেন

ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺘﻞ

ﺯﻳﺪ ﺍﺧﺬ ﺍﻟﺮﺍﻳﺔ ﺟﻌﻔﺮ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻓﺠﺎﺀﻩ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﺠﺒﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﺤﻴﺎﺓ

ﻭﻛﺮﻩ ﺍﻟﻴﻪ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ ﻭﻣﻨﻪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻥ ﺣﻴﻦ ﺍﺳﺘﺤﻠﻢ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﻓﻰ ﻓﻠﻮﺏ

ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺗﻤﻨﻴﻨﻰ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ؟ ﺛﻢ ﻣﻀﻰ ﻗﺪﻭﻣﺎ ﺣﺘﻰ ﺍﺳﺘﺸﻬﺪ ﻓﺼﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ

ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻭﺍﻻﺧﻴﻜﻢ ﻓﺎﻧﻪ ﺷﺎﻫﺪ ﺩﺧﻞ

ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻳﻄﻴﺮ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺠﻨﺎﺣﻴﻦ ﻣﻦ ﻳﺎﻗﻮﺕ ﺣﻴﺚ ﻳﺸﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ

অর্থাৎ হযরত আছিম বিন উমর বিন কাতদাহ (রাঃ) বর্ননা করেন, অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার

নামায পড়লেন এবং তাঁর জন্য দোআ করলেন তারপর বললেন তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার কর, নিশ্চয়ই সে এখন শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং ইয়াকুত ডানায়

ভর করে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছেন ”।


♣দলীর নং- ০৬: বিখ্যাত হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা কাসানী ওফাত ৫৮৭ হিজরী হাদীসটি দুজন সাহাবী এ ভাবে বর্ননা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত-

ﻓﺎﺗﺘﻬﻤﺎ ﺻﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮﺍ ﻣﺎ ﺯﺍﺩ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ ﻟﻪ ﻭ ﺭﻭﻱ

ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻼﻡ ﺍﻧﻪ ﻓﺎﺗﺘﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ

ﻓﻠﻤﺎ ﺣﻀﺮ ﻗﺎﻝ : ﺍﻥ ﺳﺒﻘﺘﻤﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻼ ﺗﺴﺒﻘﻮﻧﻰ ﺑﺎﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻪ –

অর্থাৎ উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তিগফার পড়লেন বা দোআ করলেন। আরেক বর্ননায় রয়েছে

একদা হযরত উমর (রাঃ) এর জানাযা যখনই শেষ হয়ে গেল তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)

আসলেন, তিনি বললেন হে আমার সাথীরা! তোমরা আমার পূবেই জানাযার নামায পড়ে ফেলেছো কিন্তু জানাযার পর দোআ আমাকে বাদ দিয়ে করো না অর্থাৎ আমাকে সাথে নিয়েই দোআ করো ”।

উক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরামগন জানাযার পর পুনরায় দোআ করতেন। এটা ছিল সাহাবাগনের সম্মিলিত আমল, →সুতরাং জানাযার পর দোআ করা সাহাবীদের সুন্নাত।


♣দলীল নং- ০৭: হযরত ইবরাহীম হিজরী (রাঃ) বললেন আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন আওফা (রাঃ) যিনি বাইতুর রিদওয়ানের তাঁর কন্যার ওফাত হলে তিনি তাঁর মেয়ের কফিনের পেছনে একটি খচ্ছরের

উপর সওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা

মর্সিয়া করোনা, যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মর্সিয়া করতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻓﻜﺒﺮ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺎ ’

ﺛﻢ ﻗﺎﻡ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺮﺍﺑﻌﺔ ﻗﺪ ﺭﺑﻴﻦ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺘﻜﺒﺮﺗﻴﻦ ﻳﺴﺘﻐﻔﺮ ﻟﻬﺎ ﻭﻳﺪﻋﻮ ﻭﻗﺎﻝ :

ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺼﻨﻊ ﻫﻜﺬﺍ এরপর

জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের

মধ্যখানের সময় পরিমান দো’আ করতে ছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন অনূরূপ রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

জানাযায় করতেন”।


♣দলীল নং- ০৮: বর্নিত হয়েছে একবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটা জানাযার নামায শেষ করলেন। এরপর হযরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত হলেন তাঁর সাথে কিছু লোক ও ছিল।

তিনি দ্বিতীয়বার জানাযার নামায

পড়তে চাইলেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন জানাযার নামায দ্বিতীয় বার পড়া যায়না ﻭﻟﻜﻦ ﺍﺩﻉ ﻟﻠﻤﻴﺖ ﻭ

ﺍﺳﺘﻐﻔﺮ ﻟﻪ তবে তুমি মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করত

পার এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো”।

সুতরাং উপরোক্ত দলিলাদির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম জানাযা নামাযের পর মৃত ব্যক্তির জন্য তাঁর বিদায় বেলায় মুনাজাত বা দোআ করা একটি উত্তম উপহার। আমাদের সাধারণ বিবেক বলে এত দিন যারা আমাদের একান্ত আপনজন হিসেবে ছিলেন যারা আমাদের সুখে-দুঃখে

ছিলেন তাদেরউপকার করার জন্য কোন উপায় আমাদের নেই। কেবল তাদের জন্য দোআ করাই একমাত্র উপহার। শরীয়ত সম্মত একটি উত্তম আমল জানাযার পর দোআ করার বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীরা একটি খোড়া যুক্তি অবতারনা করে বলে বেড়ায় জানাযাইতো দোআ আবার দোয়ার কী প্রয়োজন?

→আমরা বলতে চাই দোআ করা যদি না জায়েয হয় তাহলে ভাত খাওয়ার পর আর কিছু খাওয়া যাবে

না। কারন খাওয়ার পর আবার কিসের খাওয়া?

বিষয়টি একবারে হাস্যকর। মূলত জানাযা কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করা অজ্ঞতার নামান্তর। কারণ যে কারণে তারা জানাযাকে

দোআ বলতে চায় সে কারনে অন্যান্য নামাযকে ও দোআ বলতে হবে। কেননা সকল নামাযের ভিতরে কোন না কোনোভাবে দোআ রয়েছে। এবার যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা প্রয়োজন। মূলত জানাযার নামায দোআ নয়। নামাযের সকল শর্তাবলী জানাযার নামাযে ও বিদ্যমান।

যেমনঃ-

→১) জানাযার জন্য ওযু কিংবা তায়াম্মুম শর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য শর্ত নয়।


→২) জানাযার জন্য কিবলামুখী হওয়াশর্ত কিন্তু দোয়ার জন্য নয়।


→৩) জানাযার জন্য কিয়াম তথা দাড়ানো শর্ত দোয়ার জন্য নয়।


→৪) ফিকহের কিতাব সমূহে কোথাও জানাযাকে দোআ হিসেহে উল্লেখ করা হয়নি বরং সব জায়গায় লিখা আছে “সালাতুল জানাযাহ” তথা জানাযার নামায। এমনকি জানাযার পূর্বে যে নিয়ত করা হয় তাতে ও আমরা বলে থাকি “সালাতিল জানাযাহ” দোআ -ইল- জানাযাহ কেউ বলেনা।


→৫) যে কারনে নামায ভঙ্গ হয় সে কারণে জানাযার নামায ও ভঙ্গ হয়।


→৬) নামায জামাতে হয় জানাযা ও জামাতে হয়।


→৭) নামাযে নিয়্যত আছে জানাযায় ও নিয়্যত আছে।


→৮) নামাযে সালাম আছে জানাযায় ও সালাম আছে।


→৯) জানাযায় রুকু সিজদা নেই একেক ধরনের নামায একেক ধরনের হয় যেমন ইস্তিকার নামায,

ইস্তিখারার নামায, সালাতুত তাসবীহ ইত্যাদি বিভিন্ন রূপ (উসুলুশ শাশী)।


^১০) নামায থেকে সালাম দ্বারা বের হতে হয় জানাযায় ও তাই কিন্তু দোআ থেকে পৃথক হতে সালাম প্রয়োজন হয়না।


→১১) ফরয নামাযের পর দোআ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত জানাযার নামায ফরযে কেফায়া তাই

এতে ও দোআ অপরিহার্য।


→১২) সালাতুল মাগরিবকে মাগরিবের দোআ বলা হয় না বরং নামায বলা হয় তাহলে সালাতুল

জানাযাকে জানাযার দোআ কেন বলা হবে? তাই এটা ও নামায।


→১৩) নামাযের জন্য আযান আছে, জানাযার জন্য ও এলান (ঘোষনা) আছে সকল নামাযেই দোআ আছে

শুধু জানাযাকে খাস করা ঠিক নয়।


→১৪) নামাযে মাসবুক (বিলম্বে আসলে) যেভাবে পরবর্তীতে নামায সম্পন্ন করতে হয় একই ভাবে জানাযার একই হুকুম। কিন্তু দোআয় মাসবুকের মাসআলা নেই।


→১৫) দোআয় এদিক সেদিক তাকানো যায়, নামাযে ও জানাযায় তাকানো যায়না, তাই জানাযার

নামায দোআ হয় কী করে।


→১৬) নামাযে মুক্তাদীর জন্য “ইক্তিদা” আছে জানাযায় ও আছে।


→১৭) ইস্তিসকার নামায মাঠে ময়দানে হয় জানাযার নামায ও তাই বরং প্রয়োজনে মসজিদে ও পড়া যায়।


→১৮) বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরের কিতাব তফসীরে জালালাইন কিতাবে ৫০২ পৃষ্টা মধ্য সূরা ইনশিরাহ ৭-৮ নং আয়াতে আছে, আর যখন নামায হতে অবসর

গ্রহন করবে অতঃপর দোয়ার মধ্যে মশগুল হয়ে যাও। নামায শেষ হওয়ার পর দোয়ার কথা বলা হয়েছে।

 জানাযা দোআ নয় বরং নামায, তাই তাঁর পর দোআ করতে হবে। সুতরাং একটি ফরযে কিফায়ার নামাযকে কেবল দোআ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে হালকা করে দেয়ার কোন মানে হয়না।

→অতএব আসুন তর্কের খাতিরে তর্কনয় বরং সত্যকে জানার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা ও

রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনুগত্যকে মান্য করার চেষ্টা করি।

♥ বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন

(সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

Sunday, July 22, 2018

ওসীলা জায়েজ কিনা?


ওসীলা মৌলিকভাবে দুই প্রকার।

১-কোন নেক আমলের ওসীলা গ্রহণ।
২-কোন ব্যক্তিত্বের ওসীলা গ্রহণ।

প্রথম প্রকার ওসীলা তথা নেক আমলের ওসীলা জায়েজ এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা সর্বসম্মত মতানুসারে জায়েজ। যা বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি পাহাড়ের গুহায় আটকে যাবার পর স্বীয় আমলের উসীলা দিয়ে দুআ করার দ্বারা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত। দ্রষ্টব্য- বুখারী-১/১৩৭}

ব্যক্তির উসীল গ্রহণের হুকুম:

হযরত আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং আওলিয়ায়ে কেরাম এবং বুজুর্গানে দ্বীনের ওসীলা দিয়ে দুআ করা ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক জায়েজ। বরং দুআ কবুলের সহায়ক হওয়ার দরূন তা প্রশংসনীয় ও উত্তমও।

কুরআনে কারীমের আয়াত, হাদীসের বর্ণনা এবং জমহুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর বক্তব্য দ্বারা একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত। এজন্য শর্ত হল ওসীলাকে মুআসসিরে হাকীকী তথা মূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী মনে করা যাবে না। এমনও মনে করা যাবে না যে, ওসীলা গ্রহণ ছাড়া দুআ কবুলই হবে না। এমন করা সুষ্পষ্ট গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা। সেই সাথে ওসীলা গ্রহণের উদ্দেশ্য এটাও নয় যে, আম্বিয়াগণ বা আওলিয়াগণ এর কাছে স্বীয় প্রয়োজন পূরণ করতে প্রার্থনা করা হবে। তাদের কাছে প্রয়োজন পূর্ণ করার ফরিয়াদ করা হবে। এটা শিরকী আক্বিদা ও পদ্ধতি এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমনটি কতিপয় মুর্খ জাহেলরা করে থাকে।

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেই তার ওসীলা দিয়ে দুআ করা জায়েজের দলীল:

وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ﴿البقرة: ٨٩﴾

যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যা দিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করতো। {সূরা বাকারা-৮৯}

বাগদাদের মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী রহঃ বলেনঃ

نزلت في بني قريظة والنضير كانوا يستفتحون على الأوس والخزرج برسول الله صلى الله عليه وسلم قبل مبعثه قاله ابن عباس رضي الله تعالى عنهما وقتادة والمعنى يطلبون من الله تعالى أن ينصرهم به على المشركين ، كما روى السدي أنهم كانوا إذا اشتد الحرب بينهم وبين المشركين أخرجوا التوراة ووضعوا أيديهم على موضع ذكر النبي صلى الله عليه وسلم وقالوا : اللهم إنا نسألك بحق نبيك الذي وعدتنا أن تبعثه في آخر الزمان أن تنصرنا اليوم على عدوّنا فينصرون

এ আয়াত নাজীল হয়েছে বনী কুরাইজা ও বনী নজীরের ব্যাপারে। রাসূল সাঃ এর আগমণের পূর্বে যারা আওস ও খাজরাজের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে দুআ করতো। এ বক্তব্যটি ইবনে আব্বাস রাঃ এবং কাতাদা এর।

আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মানে হল, তারা এর দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যেমন সিদ্দী বর্ণনা করেন যে, যখন তাদের ও মুশরিকদের মাঝে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত, তখন তারা তাওরাত কিতাব বের করত, এবং তাদের হাত যেখানে রাসূল সাঃ এর নাম আছে তার উপর রাখতো, আর বলতো-“হে আল্লাহ! আমরা আজকে আপনার সাহায্য কামনা করছি আমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে ঐ সত্য নবীর ওসীলায় শেষ জমানায় যার আগমনের ওয়াদা আপনি করেছেন। তারপর তাদের সাহায্য করা হতো। {তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩২০}

আল্লামা মহল্লী রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ

রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে ইহুদীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য পার্থনা করে বলতো- اللهم انصرنا عليهم باالنبى المبعوث آخر الزمان তথা হে আল্লাহ! শেষ জমানায় আগমনকারী নবীর ওসীলায় আমাদের সাহায্য করুন। {তাফসীরে জালালাইন-১/১২}

একই তাফসীর নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত। 
যেমন-
১- তাফসীরে কাবীর-৩/১৮০।

২- তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী-১/৪৫৫।

৩- তাফসীরে বগবী-১/৫৮।

৪- তাফসীরে কুরতুবী-২/২৭।

৫- তাফসীরে আলবাহরুল মুহীত-১/৩০৩।

৬- তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/১২৪।

৭- তাফসীরে আবীস সউদ-১/১২৮।

৮- তাফসীরে মাজহারী-১/৯৪।

৯- তাফসীরে রূহুল মাআনী-১/৩১৯।

১০- তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৩।

১১- তাফসীরে খাজেন-১/৬৪।

১২- তাফসীরে মাদারেক-১/৩২।

১৩- তাফসীরে দুররে মানসূর-১/৮৮।

১৪- তাফসীরে তাবসীরুর রহমান আরবী-১/৫২।

১৫- সফওয়াতুত তাফাসীর-১/৭৭।

১৬- তাফসীরে আজীজী-৩২৯।

১৭- তাফসীরে মাওজাউল কুরআন-১৫।

১৮- তাফসীরে মাআরেফুর কুরআন [মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ]- ১/১৭৭।

১৯- তাফসীরে জাওয়াহেরুল কুরআন- ৪৯।

২০- বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ লিইবনে কায়্যিম হাম্বলী-৪/১৪৫।

২১- আলমিনহাতুল ওহাবিয়া লিআল্লামা দাউদ বিন সুলাইমান আলবাগদাদী হানাফী রহঃ-৩১।

বিশেষ কথা:

উসুলে ফিক্বহ এ লিখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা ও জনাবে রাসূল সাঃ যদি পর্ববর্তীদের শরীয়ত সমালোচনা বা নিষেধ করা ছাড়া বর্ণনা করে থাকেন, তাহলে সেটি আমাদের উপরও লাযেম হয়ে যায়। {নূরুল আনওয়ার-২১৬, তাসকীনুল কুলুব-৭৬, নেদায়ে হক্ব-১০১}

হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ থেকে ওসীলা জায়েজের প্রমাণ:

أن رجلا كان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له فكان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجته فلقي عثمان بن حنيف فشكا ذلك إليه فقال له عثمان بن حنيف ائت الميضأة فتوضأ ثم ائت المسجد فصلي فيه ركعتين ثم قل اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبينا محمد صلى الله عليه و سلم نبي الرحمة

এক ব্যক্তি হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ এর কাছে একটি জরুরী কাজে আসা যাওয়া করত। হযরত উসমান রাঃ [ব্যস্ততার কারণে] না তার দিকে তাকাতেন, না তার প্রয়োজন পূর্ণ করতেন। সে লোক হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি ওজু করার স্থানে গিয়ে ওজু কর। তারপর মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর বল, হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। রহমাতের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় তোমার দিকে মনোনিবেশ করছি। {আল মুজামে সগীর, হাদীস নং-৫০৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৮৩১১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১০১৮}

এ হাদীসের শেষে স্পষ্ট রয়েছে যে, লোকটি তা’ই করেছিল। তার দুই কবুলও হয়েছিল। ফলে হযরত উসমান রাঃ তাকে সম্মান দেখিয়ে তার প্রয়োজনও পূর্ণ করে দিয়েছিলেন।

হাদীসটির সনদ প্রসঙ্গে:

# উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তাবরানী বলেনঃ والحديث صحيح তথা এ হাদীসটি সহীহ। {আল মুজামে সগীর-১০৪}

# আল্লামা মুনজিরী রহঃ ও একথার পক্ষাবলম্বন করেছেন। {আত তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৪২}

# আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহঃ বলেনঃ رواه التبرانى بسند جيد তথা তাবারানী রহঃ এটাকে উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। {হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলাল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হজ্ব লিননববী-৫০০, মিশর}

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ উক্ত হাদীস বর্ণনার পর লিখেনঃ

এর দ্বারা মৃত্যুর পর ওসীলা গ্রহণ করার বিষয়টিও প্রমাণিত। এছাড়া রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার সাথে সাথে দিরায়াত তথা যৌক্তিকতার নিরিখেও তা প্রমাণিত।

কেননা, প্রথম বর্ণনা দ্বারা যে ওসীলা প্রমাণিত তা উভয় অবস্থাকেই শামীল করে থাকে। {নশরুত তীব-২৫৩}

একই বক্তব্য দেখুন- শিফাহুস সিক্বাম লিস সুবকী-১২৫, ওয়াফাউল ওয়াফা লিস সামহুদী-২/৪২০}

নিম্ন বর্ণিত ওলামায়ে কেরামও এ ওসীলাকে জায়েজ সাব্যস্ত করেছেন। 
যথা-
১- আল্লামা সাইয়্যেদ সামহুদী- ওয়াফাউল ওয়াফা-২/৪২২।

২- আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী রহঃ- শিফাউস সিক্বাম-১২০।

৩- আল্লামা আলুসী হানাফী রহঃ- রূহুল মাআনী-৬/১২৮।

৪- শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ- হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা।

৫- শাহ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদ্দেসে দেহলবী- মিআতু মাসাঈল-৩৫।

৬- শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈল শহীদ- তাক্ববিয়াতুল ঈমান-৯৫।

৭- মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্নৌবী- মাজমুআ ফাতাওয়া-৩/২৩।

৮- মাওলানা হুসাইন আলী সাহেব- বিলুগাতিল হিয়ার-১/৩৫৪।

৯- মুফতী আজীজুর রহমান, ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৫/৪৩১, ৪২৩, ৪২৪, ৪৪১।

১০- মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহঃ- ফাতাওয়া রশীদিয়া-১/৭৮।

১১- মাওলানা মুফতী শফী রহঃ- মাআরেফুল কুরআন-১/৪২, ৪৪।

বুজুর্গদের ওসীলা দেয়া প্রসঙ্গ:

রাসূল সাঃ এর ওসীলা দেয়া যেমন জায়েজ, তেমনি বুজুর্গদের ওসীলা দেয়া ও জায়েজ আছে। 
দেখুন-
১- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আলআবদারী আলমালেকী [ইবনুল হজ্ব]- মাদখাল-১/২৫৫}

২- আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহঃ- হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলালইজাহ ফী মানাসিকিল হজ্ব লিননাবাবী-৫০০।

৩- আল্লামা আলুসী রহঃ- রূহুল মাআনী-৬/১২৮।

৪- আশরাফ আলী থানবী রহঃ- নশরুত ত্বীব-৩০২-৩০৩।

৫- মুহাদ্দিসে কাবীর আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী- ইমদাদুল আহকাম-১/৪১।

৬- মাওলানা মুফতী মাহমুদ হাসান গঙ্গুহী রহঃ- ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৫/১৩৬-১৩৭}

৭- মাওলানা খায়ের মুহাম্মদ জালান্ধরী রহঃ- খাইরুল ফাতাওয়া-১/১৯৮।

ইমামুল মুনাযিরীন মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ এর একটি ঘটনা:

আমি [মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ] যেদিন ওমরায় গেলাম। সেদিন সেখানে গিয়ে দুআ করছিলাম- اللهم اسئلك بمحمد نبيك ورسولك وحبيبك তথা হে আল্লাহ! তুমি তোমার নবীজী সাঃ এর ওসীলায় আমার দুআ কবুল কর!

সেখানে এক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল- شرك شرك শিরক! শিরক!

আমি বললাম- ليس بشرك তথা এটা শিরক নয়। বরং এটি ওসীলা।

পুলিশ বললঃ توسل باالاعمال لا بالذات ওসীলা আমলের সাথে হয় ব্যক্তির সাথে নয়। অর্থাৎ কোন নেক কাজ করে দুআ চাও যে, হে আল্লাহ! আমার এ নেক আমলের বরকতে আমার দুআটি কবুল করুন। ব্যক্তির ওসীলা দিয়ে নয়। তথা এভাবে দুআ করবে না যে, হে আল্লাহ! এ ওলীর বরকতে আমার দুআ কবুল করুন। তাছাড়া আমল হল আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি নয়”।

আমি জবাবে বললামঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ তথা যাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। {সূরা মায়িদা-৫৪} আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলছেন তিনি ব্যক্তি সত্বাকে ভালবাসেন আর ব্যক্তিরাও তাকে ভালবাসে। উভয় দিকেইতো ব্যক্তি সত্বা। আমলতো নেই।

লোকটি জবাবে বললঃ ব্যক্তি প্রিয় হয় না, বরং আমল প্রিয় হয়।

তাদের মাঝে একটি ভাল গুণ হল এরা কুরআন শুনে চুপ হয়ে যায়। লোকটি চুপ হয়ে গেল। তারপর চলে যাচ্ছিল লোকটি। আমি আওয়াজ দিয়ে বললামঃ “কোন আমল দিয়ে আমি ওসীলা দিব?”

জবাবে লোকটি বলতে লাগলঃ প্রথমে দুই রাকাত নফল নামায পড়! তারপর দুআ কর এবং ওসীলা দিয়ে বল- হে আল্লাহ! এ দু রাকাত নামাযে ওসীলায় আমার দুআ কবুল কর!”

আমি বললামঃ আপনার আর আমার দুই রাকাত নামায আল্লাহর কাছে প্রিয়, অথচ রাসূল সাঃ আল্লাহর প্রিয় নয়? আশ্চর্য কথা বলছেনতো”।

আমার কথা শুনে লোকটি চলে গেল। {ইয়াদগার খুতুবাত}

Featured post

ইসলামে ঈদ কয়টি?

ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অস্বীকার করতে গিয়ে কিছু বাতিল সম্প্রদায় বলে থাকে যে, ‘দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই ” । নাউ...